আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ এবং সতর্ক থাকতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রের পেছনে অনেকের হাত রয়েছে, তারা অনেক উপায়ে সে চেষ্টা করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই স্মরণসভার আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং মানুষের ভোটের অধিকার, যা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত, সেই অধিকার যাতে নিশ্চিত থাকে, মানুষ যেন তার ভোট শান্তিপূর্ণভাবে দিতে পারে, সেই পরিবেশ রাখতে হবে।’ বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রের পেছনে অনেকের হাত রয়েছে এবং তারা অনেক উপায়ে চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ।’
দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, প্রতি ছয় মাস পর পর প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় তাঁর নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও হিসাব-নিকাশ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যে সিদ্ধান্ত দেব, সে সিদ্ধান্ত মানতে হবে।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ে নানাভাবে চক্রান্ত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবকিছুর উৎপাদন বেড়েছে, তাহলে কিসের অভাব হবে। এগুলোর পেছনে কারা আছে? এদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
নির্বাচনে এলে ক্ষমতায় যেতে পারবে না ভেবে নেতৃত্ববিহীন দল বিএনপি সারা দেশে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য-জ্বালাও-পোড়াও করতে মেতে উঠেছে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অগ্নিসন্ত্রাসী ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে কারও ওপর নির্ভর করলে হবে না। জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস যারা করে, তাদের ধরে যে হাতে আগুন দেয়, ওই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যে আদর্শ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, জাতীয় চার নেতা জীবন দিয়েছেন, সেই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ওই সব দুষ্কৃতকারী কয়েকজনের লাফালাফি এ দেশে কোনো দিনও নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না। এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে আসন পাবে না দেখে নির্বাচন করবে কি না সন্দেহ। আর নির্বাচনে এলেও আসবে ওই মনোনয়ন–বাণিজ্য করার জন্য। তিনি আরও বলেন, তারা নির্বাচন কাকে নিয়ে করবে? নির্বাচন করলে ওদের নেতা কে? কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে? কাকে দিয়ে মন্ত্রিসভা করবে? বিএনপির চেয়ারপারসন (খালেদা জিয়া) এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত, মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। সে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আর রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। শোনা যায়, লন্ডনে বসে জুয়া খেলে নাকি কোটি কোটি পাউন্ড কামাই করে। এটাই তার আয়ের উৎস।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপির অবস্থানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফিলিস্তিনে আজ কী হচ্ছে? হাসপাতালে বোমা মেরেছে। আর এখানে কী দেখলাম? এই বিএনপি-জামায়াত পুলিশ হাসপাতালে আগুন দেয়, অ্যাম্বুলেন্স পোড়ায়। ভাঙচুর করে। এরা কোথা থেকে কী শিক্ষা পাচ্ছে? সেটাই আমাদের প্রশ্ন। ফিলিস্তিনে জনগণের ওপর যখন অত্যাচার হচ্ছে, আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এদের (বিএনপি) মুখে একটাও কথা নেই। তারা কী একটা প্রতিবাদ করেছে? করেনি। তাহলে কাদের তাঁবেদারি তারা করে? কাদের পদলেহন করে লাফালাফি করে, সেটাই প্রশ্ন?’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দলের কার্যনির্বাহী সদস্য এবং হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুশফিক হোসেন চৌধুরী, সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল স্মরণসভা সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।