লড়াই শুরু হয়ে গেছে, মানুষ নেমে পড়েছে: মির্জা ফখরুল

জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
 ছবি: সাজিদ হোসেন

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘লড়াই শুরু হয়ে গেছে। মানুষ নেমে পড়েছে। এখন নয়ন, শাওন, রহিম, আলীমের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে আমাদেরকে রক্ত দেওয়ার জন্য তৈরি হতে হবে। আরেকটা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাদেরকে পরাজিত করতে হবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম।

গত শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদলের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম ওরফে নয়ন মিয়ার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘চিন্তা করে দেখেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের নয়নকে গুলি করেছে, কোনো কারণ নেই। তর্ক করছে, তর্কের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেখানে ছেলেটা (রফিকুল) বলেছে, ছেড়ে দাও। তাঁর সামনে ছিল এক কনস্টেবল। তাঁকে (রফিকুল) গুলি করেছে। খুব ক্লোজ রেঞ্জ (কাছ থেকে) থেকে, নাড়িভুঁড়ি সব বেরিয়ে গেছে। এটা কোনো দেশ হলো। জনগণ তোমাদের বিচার করবেই।’

আওয়ামী লীগের কথা কেউ বিশ্বাস করে না দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তারেক রহমান নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন যে আন্দোলন করে এই সরকারকে সরাব। পরে আন্দোলনকারী সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব। কারণ, সব মানুষকে এক করে দেশকে পরিষ্কার করতে হবে। বিচার, প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তিনি (ইকবাল হাসান) এখানে বসে আছেন। আপনারা কি জানেন, তাঁর মামলা চলছে। যে মামলায় তিনি খালাস হয়ে গেছেন, আবার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে…। শুধু তাঁকে নয়, আমাদের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা শুরু করেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিচার বিভাগকে বলতে চাই, বিচারকদের প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই, দয়া করে ন্যায়বিচার করুন। কারণ, এ দেশে বহু প্রমাণ আছে, বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে ওই জনতা। সুতরাং কোনোটাই পার পাবেন না। বারবার করে বলছি, ৭১ সালে লাখ লাখ মানুষ রক্ত ঢেলে দিয়েছে। এখন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা ৩৫ লাখ মানুষকে আসামি করা হয়েছে, সাতজন যোদ্ধা প্রাণ দিয়েছেন, এর মূল্য অবশ্যই আপনাদের দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘ঢাকায় আমাদের শেষ সমাবেশ। কিন্তু এই ঢাকার সমাবেশ নিয়ে তাদের (আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে) কাপড় বাসন্তী রং হয়ে গেছে। যার কারণে আবোলতাবোল বলা শুরু করেছে।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খেলায় নিয়মের বাইরে গেলে খবর আছে। নিয়মের বাইরে যাওয়ার লাইনম্যান, রেফারি কী আপনি? এর রেফারি বিএনপি। আমরা নির্ধারণ করব খেলার নিয়ম।’

আলাদত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাকে নাটক বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, গতকাল আদালত পাড়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, সেটাও প্রহসনের নাটক কি না, সেটা নিয়ে জনগণের প্রশ্ন দীর্ঘায়িত হয়েছে। জঙ্গি, তাঁর হাতে-পায়ে কড়া, সেখানে আক্রমণ হয়ে গেল, এত পুলিশের বেষ্টনী, সেই অবস্থায় মোটরসাইকেলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলো—এগুলো মানুষ ভিন্নভাবে দেখছে। নাটক বলে মনে করছে। এটা কি ওবায়দুল কাদেরের সেই নাটকের অংশ কি না? আজ জঙ্গি ধরার নাম করে ১০ ডিসেম্বরের আগে বিএনপির নেতাদের বাড়িতে কম্বাইন্ড রেড (সম্মিলিত তল্লাশি) হবে কি না, নানাভাবে নিপীড়ন-নির্যাতনের দিকে নিয়ে যাবে কি না—সে আলামতগুলো এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে।

উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।