বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই মাস পার হতে চললেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কোনো খবর নেই। সিন্ডিকেট বহাল আছে। নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ দিশাহারা। তাঁরা বলছেন, সার–কীটনাশকের দাম বেড়ে গেছে। কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কৃষক খেতমজুরের স্বার্থে কোনো আলোচনাই দেখা যাচ্ছে না। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নিয়েও আলোচনা নেই। অথচ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দাবির কাছে সরকার নতজানু হচ্ছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে সিপিবির নেতারা এসব কথা বলেন।
শ্রমিক হত্যার বিচার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, রেশনব্যবস্থা চালু, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে জনজীবনে শান্তি, সর্বত্র সম্প্রীতি রক্ষা, দুর্নীতি-লুটপাট-দখলদারত্ব বন্ধ, পাচারের টাকা-খেলাপি ঋণ আদায়, শ্রমিকের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি, কৃষক ও খেতমজুরের স্বার্থে নীতি প্রণয়ণসহ নানা দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বৈরাচারের পতন ঘটলেও সর্বত্র দখলমুক্ত হয়নি। অনেক জায়গায় এক দখলদারের পরিবর্তে আরেক দখলদার জায়গা করে নিচ্ছে। জনজীবনের শান্তি ফিরে আসেনি। দেশের সর্বত্র ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান এবং নির্বিঘ্নে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা দিতে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলেন, এ জন্য এলাকায় এলাকায় সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এ সময় কেউ যদি অপতৎপরতা করার দুঃসাহস দেখায়, তাদের চিহ্নিত ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
ঢাকাসহ বিভিন্ন নগরীতে জলজট-যানজট সৃষ্টিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সিপিবির নেতারা বলেন, অতীতের শাসকেরা উন্নয়নের নামে জনগণকে সম্পৃক্ত না করে সংকট হলেই এক–একটা প্রজেক্ট নিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করেছে। এ সময় তারা তো ক্ষমতায় নেই। এই সরকার এসব সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করতে পারবে, সেটি আশা করা হয় না। তবে এসব সংকট সমাধানের কার্যক্রম শুরু হলো না কেন? এটা জানতে হবে।
পাচারের টাকা ফেরত আনা, খেলাপি ঋণ আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন সিপিবি নেতারা। তাঁরা বলেন, বিগত দিনের সরকার মুক্ত বাজারের নামে লুটপাটের ধারায় এই অর্থনীতি পরিচালনা করেছে। তারই অনিবার্য পরিণতি ছিল এই দুর্নীতি-লুটপাট, আর দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি। সিপিবি নেতারা এই লুটপাটের ধারার অর্থনীতি পরিবর্তন করে দেশ ও মানুষের স্বার্থে সমাজতন্ত্র অভিমুখিন অর্থনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স), সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, সদস্য কাজী সাজ্জাদ জহির, জলি তালুকদার, সাজেদুল হক প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে পুরানা পল্টনে সিপিবির কার্যালয় এসে শেষ হয়। সিপিবির উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় আজ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আগামীকালও অনেক জেলায়-উপজেলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।