গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের ঘটনা উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, মজলুম সংগঠন জামায়াতে ইসলামীসহ গোটা দেশের প্রতি আল্লাহ তাআলা গত ৫ আগস্ট করুণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘দেশের সব শ্রেণি–পেশার মানুষের ওপর গত সাড়ে ১৫ বছর যে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, সেসব থেকে আল্লাহ তাআলা সবাইকে মুক্তি দিয়েছেন। আমাদের বুকের ওপর থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসকের জগদ্দল পাথর সরে গিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ উপহার পেয়েছি।’
আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের সাফা আর্কেডে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন।
মিয়া পরওয়ার বলেন, এই ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসানের জন্য কোটি কোটি মানুষ যে সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ করেছে, রক্ত ঝরিয়েছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে আজীবন লেখা থাকবে।
জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য থেকেই আওয়ামী সরকার জামায়াতের নেতাদের হত্যা এবং পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলন তাদের সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। জুলাই মাসের তরুণ ছাত্রসমাজের আন্দোলন এবং রক্তের মধ্য দিয়ে দেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে জামায়াত।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘দল-মতনির্বিশেষে পুরো জাতিকে এক হতে হবে। সাম্প্রদায়িক হানাহানি, বিশৃঙ্খলা দূর করতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে আছি আমরা।’
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য আহছানুল্লাহ ভূঁইয়া, মুহাম্মদ জাফর সাদেক, মুহাম্মদ আমিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আমির নুরুল আমিন, দক্ষিণ জেলার আমির আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারি মুহাম্মদ নুরুল আমিন প্রমুখ।
শিল্প খাতকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা
গাজীপুর ও ঢাকার আশুলিয়ায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের মুখে পোশাকশিল্পে চরম অস্থিরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার। বিবৃতিতে তিনি বলেন, গত ১৬ বছর বিজিএমইএতে ভোটবিহীন আওয়ামী নেতাদের পুনর্বাসন ও লুটপাটের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হয়েছিল। সর্বশেষ বিজিএমইএর সভাপতির পদ দখল করে নেয় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি এস এম মান্নান। শোনা যায়, তাঁর নিজের কোনো গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত নেই। ছাত্র-জনতার বিপ্লবী আন্দোলনে মিরপুর ও উত্তরায় নির্বিচার হত্যায় তাঁর সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। এমতাবস্থায় চলমান শ্রমিক আন্দোলনে এস এম মান্নান ও তাঁর নিয়োগকৃত বর্তমান বোর্ড এই আন্দোলনের পেছনে ইন্ধনকারী হিসেবে কাজ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
সেই সঙ্গে বিবৃতিতে মিয়া পরওয়ার বলেন, ‘পোশাক খাতে কর্মরত সব শ্রমিক সংগঠনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, যেসব দুষ্কৃতকারী গোষ্ঠী শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে দেশ ও শিল্প খাতকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে, আপনারা তাদের চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করুন এবং সম্ভব সব প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করুন।’