বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা ও বাংলাদেশ জাসদের নেতা-কর্মীরা পুরানা পল্টনে সমাবেশ ও শোকমিছিল করেন। ঢাকা, ২৬ জুলাই
বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা ও বাংলাদেশ জাসদের নেতা-কর্মীরা পুরানা পল্টনে সমাবেশ ও শোকমিছিল করেন। ঢাকা, ২৬ জুলাই

এই আন্দোলন জনতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে এখন গণগ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন বামপন্থী দলের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, আন্দোলনের যে আগুন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, তা দমন-পীড়ন করে বন্ধ করা যাবে না। কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করলেও বাস্তবে এ আন্দোলন সরকারের দুর্নীতি-লুটপাট ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকা জনতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ।

রাজধানীর পুরানা পল্টনে আজ শুক্রবার বিকেলে আয়োজিত সমাবেশ ও শোকমিছিলে নেতারা এসব কথা বলেন। কালো পতাকা হাতে ও কালো ব্যাজ ধারণ করে এই সমাবেশ ও শোকমিছিলের আয়োজন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা ও বাংলাদেশ জাসদ।

শোকমিছিলের আগে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। এতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার বেলাল চৌধুরী ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, পত্রিকার তথ্য বলছে, ২০৬ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। হাজারো মানুষ আহত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে এত অল্প সময়ে আর কখনো এমন ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেনি। এখন গণগ্রেপ্তার চলছে অভিযোগ করে নেতারা বলেন, সরকার যদি ভাবে এভাবে দমন-পীড়ন চালিয়ে তারা আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে পারবে, তবে তারা ভুল পথে হাঁটছে।

সমাবেশ থেকে কয়েকটি দাবিও জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার করতে হবে। ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। স্বাধীন কমিশন গঠন করে অংশীজনের মতামত নিয়ে কোটাব্যবস্থা নিয়ে উদ্ভূত সংকটের স্থায়ী সমাধান করতে হবে। অবিলম্বে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হলগুলো খুলে দিতে হবে। ক্যাম্পাসগুলো থেকে ‘সন্ত্রাসীদের’ তাড়িয়ে আন্দোলনকারীসহ সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিহত-আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং গণগ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে।

সব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের দাবি

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন আজ বিকেলে শাহবাগে তাদের কার্যালয়ে আলোচনা সভা করেছে। এতে সব হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের দাবি জানানো হয়।

সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা হারুনার রশিদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সভায় দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি কোনো অবস্থাতেই যেন নিরীহ কাউকে হয়রানি করা না হয়, সে বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলকে সচেষ্ট থাকার অনুরোধ জানানো হয়। সংগঠনের নেতারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের সংযোগ কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।