ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে গিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সেখানকার আলোচনা তুলে ধরে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তাঁরা বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
বুধবার সকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ওই সাক্ষাৎ হয়। বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এ প্রসঙ্গে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপি নেতাদের প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‘ভূত’ মাথা থেকে নামিয়ে ফেলার আহ্বান জানান তিনি।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে গিয়েছিলাম। আজকে আমেরিকান অ্যাম্বাসেডরকে আমরা বলে এসেছি, ইট ইজ নট পসিবল টু রিটার্ন টু সো-কল্ড কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট অ্যাগেইন।’
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৪ সালে বিএনপি জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও তাঁরা মাত্র সাতটি আসন পায়। ওই নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট হয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে বিএনপির।
আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি বলছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এর মধ্যে বুধবার মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলে এলেন ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা।
বিএনপির মতো সাড়া–শব্দ দিয়ে নয়, নীরবে মার্কিন দূতাবাসে গিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘আমরা আবার বিএনপির মতো মিডিয়া-টিডিয়া নিয়ে যাই না। তারা ইন্ডিয়ান অ্যাম্বাসিতে গিয়েছিল, সেখানে বোধ হয় মিডিয়ার বুম ছিল না। পরে তারা সবাইকে ডেকে নিয়ে যা কথা হয়েছে, সেটাও বলেছে; যে কথা হয়নি, সেটাও বলেছে। অবস্থাটা এমন দেখলাম যে মনে হয় যেন ভারত জয় করে এসেছে। আমরা সেটা না। আমরা নীরবে গিয়ে নিঃশব্দে চলে এসেছি।’
বিএনপির বিরুদ্ধে কূটনীতিকদের কাছে ধরনা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠেই চোখ কচলাতে কচলাতে তারা (বিএনপি) বারিধারা-গুলশানে যায়, ব্রেকফাস্টে বসে কত গল্প করে! তারা নাকি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে উৎখাত করবে! ১০ ডিসেম্বর নাকি খালেদা জিয়া দেশ চালাবে, তারেক নাকি দেশে ফিরবে! শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টনও পেল না, পেল গোলাপবাগের গরুর হাট।’
বিএনপির অবস্থা এখন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা কাদায় আটকে পড়া গরুর গাড়ির মতো বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন এখন চোরাবালিতে আটকে গেছে। সামনেও যায় না, পেছনেও যায় না; ডানেও যায় না, বাঁয়েও যায় না।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ফখরুল বলেন, আমরা নাকি গণতন্ত্র ধ্বংস করেছি। গণতন্ত্রকে তোমরা কবর দিয়েছ। ভুয়া ভোটার তালিকা করে মাগুরার নির্লজ্জ উপনির্বাচনের কথা ভুলে গেছেন? গণতন্ত্র হত্যা বিএনপি করেছে। তাদের হাতে এই দেশ আর যাবে না।’ বিএনপি ধ্বংস করেছে, শেখ হাসিনা মেরামত করেছেন দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন তারা রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা, সরকার উৎখাতের ১০ দফা দিচ্ছে। এগুলো সব ভুয়া। এসব দফা, তাদের আন্দোলন, পদযাত্রা-বিক্ষোভ মিছিল সব ভুয়া। তাদের নেতাও ভুয়া।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ‘অবৈধ দলের অবৈধ মহাসচিব’ আখ্যায়িত করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বিএনপির একটা গঠনতন্ত্র আছে। সেখানে কোথায় আছে, ফখরুল (সম্মেলন ছাড়া) ১২ বছর ধরে মহাসচিব? সে তার বৈধতা হারায়নি? সে যে পদত্যাগ দাবি করে, তার নিজেরই তো পদত্যাগ করা উচিত। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই তো সে অবৈধ হয়ে গেছে।’ গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগের তিনবার সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির একটাও হয়নি। সরকারের পদত্যাগ! আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য ফখরুলের পদত্যাগ করা উচিত।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। বিশেষ আলোচক ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। এতে আরও বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান।