ইসরায়েলের নজরদারি প্রযুক্তি এনে বিরোধী দলের নেতাদের ফোন হ্যাক করছে সরকার, এ অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘পকেটের টেলিফোনটাই এখন বড় শত্রু। ফোনে কথাবার্তা সবকিছুই এখন নজরদারিতে।’
আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটি সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ইসরায়েলি প্রযুক্তি পেগাসাস ব্যবহার করে সরকার বিরোধী দলের নেতাদের ফোন হ্যাক করা হচ্ছে। বিরোধী দলকে দমনের জন্য এবং বিরোধী মতকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে তারা (সরকার) এটা করছে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে না।
ইসরায়েলের সাবেক এক গোয়েন্দা কমান্ডার পরিচালিত কোম্পানি থেকে নজরদারির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বাংলাদেশ সরকার কিনেছে বলে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক সংবাদ প্রকাশ করেছিল। ইসরায়েলি পত্রিকাকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমেও এ খবর প্রকাশ হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের কোনো কেনাকাটার খবর তখন অস্বীকার করেছিল।
এখন বিএনপি মহাসচিব ইসরায়েলের নজরদারি প্রযুক্তি এনে বিরোধী দলের নেতাদের ফোন হ্যাক করার অভিযোগ তুললেন।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ মেটাতে সংলাপের বিষয় এখন আলোচনায় আসছে। সে প্রসঙ্গেও কথা বলেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপের বিষয় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করে গিয়েছিলাম। কিন্তু বোকা বানিয়ে দিয়েছিল। ফলে এদের সঙ্গে সমঝোতা করা যায় না? সমঝোতা করে লাভ হবে না, এরা আবার প্রতারণা করবে।’
২০২৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের উদাহরণও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি প্রশ্ন করেন, কীভাবে আশা করেন এই অবস্থায় এই সরকারের অধীনের নির্বাচন হলে মানুষ ভোট দিতে পারবে? মির্জা ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নির্বাচন থেকে বিরোধী দলগুলোকে সরে যাওয়ার জন্য চক্রান্ত শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে আগের মামলাগুলোর বিচার দ্রুত শেষ করার জন্য।
নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১১ সালের ১০ মে বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ সংক্ষিপ্ত আদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দিয়েছিল।
কিন্তু সেখানে পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, নিরাপত্তার স্বার্থে এবং বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দুটি নির্বাচন করা যেতে পারে। কিন্তু সরকার এ নিয়ে ডাহা মিথ্যাচার করছে। কারণ, তারা দেখেছে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন হলে ভোট পাবে না।
রাজনীতির বাইরে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকার মেগা প্রজেক্টের কথা বলে। কিন্তু প্রতিদিন ৫০ জনের মতো লোক মারা যায় রাস্তায়। কারণ, পুরো সড়কে নৈরাজ্য, কোনো দেখভাল নেই। আর ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ২০ হাজার কোটি টাকা। কারণ, টাকা বাইরে পাচার করা হয়।
মির্জা ফখরুল ডেঙ্গু পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ড নিয়ে সে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। কলকাতায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। দেশে জনগণ কর দিচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ শুধু বড় বড় কথা বলছে।
ঢাকায় এ আলোচনা সভায় এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানসহ প্রমুখ।