জুলাই ও আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা যাতে কোনোভাবে ‘হাইজ্যাক’ না হয়ে যায়, সে জন্য দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটির নেতারা বলছেন, এ জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিজ নিজ দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে সিপিবির নেতারা এ কথাগুলো বলেন। জুলাই ও আগস্টে গণহত্যার বিচার; জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনা; সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা; পাচারের টাকা ফেরত ও খেলাপি ঋণ আদায়; ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য, মন্দির-মাজার ও নারীর ওপর হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি; সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও পাহাড়ে হামলা বন্ধের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের ৪০ দিন পার হলেও এখনো তাদের ‘মধুচন্দ্রিমা’কেটেছে বলে মনে হচ্ছে না। তারা এখনো নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়ে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। দখলদারি-চাঁদাবাজি থেকে দেশকে মুক্ত করে ভয়ের রাজত্বের অবসান ঘটাতে দৃশ্যমান রূপরেখা সামনে আনতে পারছে না।
বক্তারা আরও বলেন, গণতান্ত্রিক সংস্কারের কার্যক্রম শুরু ও নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মধ্য দিয়ে জনগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সময়ের দাবি। এই কাজে দৃশ্যমান ভূমিকা পালনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় যে হত্যাকাণ্ড ও ভাঙচুর সংঘটিত হয়েছে, তা মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে উল্লেখ করে নেতারা বলেন, এর আগে সংঘটিত ভাঙচুর ও চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষের মনে উদ্বেগ রয়েই যাচ্ছে। এসব ঘটনায় দেশি-বিদেশি নানা অপশক্তি নানামুখী কার্যক্রম করার সুযোগ পাচ্ছে। এ সময় ছাত্ররাজনীতি বন্ধসহ বিরাজনীতিকরণের নানা ‘অপচেষ্টার’ বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তাঁরা।
সিপিবির নেতারা বলেন, এই সরকারকে মনে রাখতে হবে, তারা একটি অন্তর্বর্তী সরকার। তারা নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে একটি গ্রহণযোগ্য শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আয়োজন করবে। একই সঙ্গে বেশ কিছু জায়গায় সংস্কারের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব উত্থাপন করে ওই সব কাজের সূচনা করবে। বাকি কাজ সম্পন্ন করবে নির্বাচিত সরকার। এসব কাজ করতে হবে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে। এসব কাজে জনগণের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিবির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, পরেশ কর, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান, এম এম আকাশ, ক্বাফি রতন, কাজী রুহুল আমিন প্রমুখ।