মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এলাকা এবং শাহবাগ মোড়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা হয়েছে। সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তিন নেতাসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই মামলা করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জব্বার বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন জামায়াতের সহকারী মহাসচিব হামিদুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ওরফে মাসুদ, ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম ও সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম আজ বুধবার মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, এই মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
এর আগে গতকাল রাতে সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে জামায়াতের ১১৬ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় পৃথক মামলা করে পুলিশ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গত সোমবার রাতে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সেই খবরে জামায়াত-শিবিরের হাজারো নেতা–কর্মী রাতেই বিএসএমএমইউ ও শাহবাগ এলাকায় ভিড় করেন। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক স্লোগান দেন। একপর্যায়ে মিছিল করে তাঁরা শাহবাগ থেকে বাংলামোটর ও শাহবাগ মৎস্য ভবনের মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় শাহবাগের বারডেম ও বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আটকা পড়েন। পুলিশ তাঁদের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন তাঁরা। সড়ক না ছেড়ে তাঁরা সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। গতকাল ভোরের দিকে সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুরে তাঁর নিজ বাড়িতে নেওয়ার সময় জামায়াত–শিবিরের নেতা–কর্মীরা ইটের টুকরা, লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান এবং সরকারি কাজে বাধা দেন। তাঁরা বিএসএমএমইউর ভেতরে সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে ক্ষতিসাধন করে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেলও ছোড়েন এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ সময় পুলিশের গাড়ি, মোটরসাইকেল, সাঁজোয়া যানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সাঈদীর মরদেহ বহনকারী ফ্রিজিং ভ্যান বের করে আনে। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে জামায়াত–শিবিরের নেতা–কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সাঈদীর ধর্মীয় বক্তা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জামায়াতের মনোনয়নে পিরোজপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ২০১৪ সালে সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ।
ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর রায়ের পর দেশজুড়ে সহিংসতা চালায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। সাঈদীর মৃত্যুর পর গতকাল মঙ্গলবার গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করেও ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় জামায়াত–শিবিরের নেতা–কর্মীরা। এর মধ্যে কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংঘর্ষের সময় একজন নিহত হন।