সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের কাদের টাকা আছে, সরকার কেন সে সম্পর্কে জানতে চায় না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তাঁরা সুইস ব্যাংকে টাকা পাচারকারীদের নিয়ে সরকারের অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে এক সমাবেশে জোট নেতারা এ প্রশ্ন তোলেন। ‘ফ্যাসিবাদ হটাও, শাসনব্যবস্থা বদলাও, জ্বালানি তেলের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি রুখে দাঁড়াও’ স্লোগানে এ সমাবেশ করে গণতন্ত্র মঞ্চ।
৮ আগস্ট রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই জোট আত্মপ্রকাশ করে। জোটভুক্ত দলগুলো হলো জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
সমাবেশে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘সুইস ব্যাংকে কাদের টাকা আছে, তালিকা দেখলে বোঝা যাবে, তারা সরকারের কোলে বসে আছে।’
বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিকদের জমা করা অর্থের বেশির ভাগ অবৈধ পথে আয় করা হয়েছে, এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত সুইস ব্যাংক বা কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি। ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আজকের সমাবেশে এরই জের ধরে বক্তাদের কথায় ফিরে আসে সুইস ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখার প্রসঙ্গ।
দুই দশকের মধ্যে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক বা সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ অর্থ জমা হয়েছে গত বছর। বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে এসব অর্থ জমা হয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কোনো দেশের টাকা যদি অবৈধভাবে পাচার হয়, সেই দেশ যদি সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয়, তাহলে তারা কারা টাকা পাচার করেছে এবং কত টাকা পাচার করেছে, সেই তথ্য দেয়। কিন্তু গত কয়েক বছরে সরকার এই তালিকা চায়নি। কেন চায়নি? কারণ, থলের বিড়াল বের হবে। এরা যে চোর, অর্থ পাচার করে, এটা প্রমাণিত হবে।’
দেশ থেকে টাকা পাচারের কারণে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তারা বলত দেশ বদলে দেবে, কিন্তু দেশ আজ চোর-ডাকাতদের হয়েছে। তাদের কাছে ভালো সমাজব্যবস্থা আশা করা যায় না। গণতন্ত্র মঞ্চের লক্ষ্য হচ্ছে, আমরা একটা গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ করতে চাই। গরিব মানুষ যাতে ভালো থাকে, তার সমাজ নির্মাণ করতে চাই। দেশে যাতে আইনের শাসন থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে চাই।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার মধ্যরাতে ভোট ডাকাতির মতো জনগণের ভাগ্য নির্ধারণও করে মধ্যরাতে। সরকার মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বললেও দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদার বিরুদ্ধে পরিচালনা করছে। উন্নয়ন আজ ‘ফানুস’ হিসেবে মানুষের সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সারা দেশের মানুষের জীবনকে নাভিশ্বাসের দিকে নিচ্ছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের নামে মোমবাতি, কুপি ও হারিকেন ধরিয়ে দিয়েছে।
গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক বলেন, সব জিনিসের দাম বাড়ছে। মানুষের মনে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সরকার জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ নয়। তারা জনগণের কথা শুনছে না।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাউয়ূম প্রমুখ বক্তব্য দেন।