বিএনপির সাতজন পদত্যাগ করলে কি সংসদ অচল হয়ে যাবে: ওবায়দুল

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
ফাইল ছবি

সিদ্ধান্ত জানালে দলীয় সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করবেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যে গুরুত্ব দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, ‘তাঁদের সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলে কি সংসদ অচল হয়ে যাবে?’

আজ রোববার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। আগামী ২৪ ডিসেম্বর দলটির ২২তম জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতির বিষয়ে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

দলীয় সিদ্ধান্ত জানালে সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করবে, বিএনপির এমন ঘোষণা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হুমকির কী আছে? তাতে কি সংসদ অচল হয়ে যাবে? তাঁরা কয়জন? সাতজন। পদত্যাগের ব্যাপারটা তাঁদের দলের সিদ্ধান্তের বিষয়। এটা আমাদের বিষয় নয়।’

বিএনপির সঙ্গে খেলা হবে: ওবায়দুল কাদেরবর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি, এটাই তাদের এক দফা—দলটির এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখনো নির্বাচনের এক বছর বাকি। অনেক সময়। এর মধ্যে কত কিছু ঘটে যাবে। নাটকের পর নাটক। বিএনপি তো রঙ্গে রঙ্গের নাটক। গতবারও আসবে না, আসবে না। পানি ঘোলা করে শেষ পর্যন্ত ঠিকই এসেছে। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে গড়ায়, সেটা দেখুন।’ তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, মধুমতির জল গড়িয়ে যাবে অনেক দূর। জল যাবে মিশে বঙ্গোপসাগরে। কাজেই অপেক্ষা করুন। সময়ে অনেক কিছু বদলায়।’

আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দলের সভাপতি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমরা সমন্বয় করছি। কখন কোন সম্মেলন হবে। নেত্রীর উপস্থিতিটা তাঁরা চান। কাজেই তাঁর সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে আমরা তারিখগুলো দিয়ে দেব। তবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

সেটা কি আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগেই হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ সব সংগঠনের সম্মেলন হবে। আমরা করে নেব।’ ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সম্মেলন কি হবে—এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব সব। মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনেরও সম্মেলন হবে।’

আওয়ামী লীগ বিএনপির পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচি করবে না বলে জানান ওবায়দুল কাদের। আগামী ৫ নভেম্বর কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘সেই তারিখে দেখছি, তাদেরও বরিশালে সমাবেশ আছে। তাহলে কি এটাকে আপনি পাল্টাপাল্টি বলবেন? বিএনপির সঙ্গে পাল্টাপাল্টির কোনো বিষয় নেই।’

করোনার কারণে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি বাইরে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেননি বলে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) বেশ কিছুদিন ধরে বলছিলেন বাইরে জনসভা করবেন। প্রথমে দুই–তিনটি জেলা নির্দিষ্ট করে বলেছেন যে এগুলোতে সমাবেশ করবেন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলায়ও করবেন।’

গণভবনে প্রতি সপ্তাহে দুটি করে জেলার নেতাদের সঙ্গে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বৈঠক করবেন বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বর্ধিত সভায় যাঁরা উপস্থিত থাকেন, এই পর্যায়ে গণভবনে দুটি জেলার সঙ্গে সপ্তাহে একবার করে বসবেন।

আওয়ামী লীগ বিরোধীদের দমনে জঙ্গিবাদ ও অগ্নি সন্ত্রাসের ভোঁতা অস্ত্র ব্যবহার করছে বিএনপির এমন দাবি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তি ছাড়া বিএনপির সভা-সমাবেশ অচল। জঙ্গিবাদ তাদের হাতেই সৃষ্টি। সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে দলটি। এটা আগেও ছিল, এখনো আছে। তিনি বলেন, ‘আগুন–সন্ত্রাস করতে আসুন। মাঠে আসুন। জনগণ প্রস্তুত। তাদের নিয়ে প্রতিরোধ করা হবে। আগুন–সন্ত্রাস করতে দেওয়া হবে না। আন্দোলন করুক আমাদের আপত্তি নাই।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিএনপিকে আন্দোলন করতে দেওয়ার জন্য বলেছেন বলে উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘কোনো প্রকার বাধাবিঘ্ন আমরা সৃষ্টি করি নাই। পরিবহন ধর্মঘট... পরিবহনের লোকেরা তাদের ভয় পায়। আমরা কী করব? সেখানে আওয়ামী লীগও আছে, বিএনপিও আছে। জাতীয় পার্টিও আছে, সবাই আছে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, শ্রমিক ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিএনপির শিমুল বিশ্বাস। তাই বিএনপিকে পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বিএনপি হই হই, রই রই করলেই পরিবহনশ্রমিকেরা ভয় পায়। আবার আগুন–সন্ত্রাস এসে পড়ে!’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ওয়াসিকা আয়েশা খান, আবদুস সোবহান গোলাপ, বিপ্লব বড়ুয়া, দেলোয়ার হোসেন, সেলিম মাহমুদ, সায়েম খান প্রমুখ।