মহান বিজয় দিবসে রাজধানীতে ‘বিজয় র‌্যালি’ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি
মহান বিজয় দিবসে রাজধানীতে ‘বিজয় র‌্যালি’ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি

জাতীয় নাগরিক কমিটির সমাবেশ

শেখ হাসিনার বিচারের আগে যারা নির্বাচন চাইবে, তারা জাতীয় শত্রু

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের নাগরিকদের হয় দালাল বানিয়েছেন, নাহয় দাস বানিয়েছেন। সেই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। যারাই বিচারের আগে কোনো নির্বাচনের পাঁয়তারা করবে, তাদের জাতীয় শত্রু হিসেবে ধরে নেওয়া হবে।

মহান বিজয় দিবসে ‘বিজয় র‌্যালি’ শেষে এক সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা এসব কথা বলেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির বিজয় মিছিল আজ সোমবার বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বাংলামোটর থেকে শুরু হয়। এরপর মিছিলটি শাহবাগ, আজিজ সুপার মার্কেট, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, নীলক্ষেত, পলাশী হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় যায়। সেখানে তখন আরেকটি কর্মসূচি চলছিল। তাই মিছিলটি টিএসসি হয়ে শাহবাগে এসে বিকেল পাঁচটায় শেষ হয়। সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

সমাবেশে সমাপনী বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, আগামী দিনে যারাই বিচারের আগে কোনো নির্বাচনের পাঁয়তারা করবে, তাদেরকে জাতীয় শত্রু ও বেইমান হিসেবে ধরে নেওয়া হবে।

নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা বুলেট ক্রস করেছি, আগামী দিনে যদি ব্যালটের রেভল্যুশন (নির্বাচন) আসে সেটাও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। তবে সেটা বিচারের আগে নয়। বিচার হবে, এরপর নির্বাচন।’

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত হতে দেওয়া হবে না মন্তব্য করে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, সামনে এখন দুটি শত্রু। একটি হলো মুজিববাদ, আরেকটি হিন্দুত্ববাদ। এই দুই শক্তিকে দক্ষিণ এশিয়ায় মোকাবিলা করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘একাত্তরে শেখ মুজিবুর রহমান পারিবারিক মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছিলেন। মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সার্বভৌমত্বকে ভারতের কাছে লিজ দিয়েছিল। মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নাগরিকদের হয় দালাল বানিয়েছেন, নাহয় দাস বানিয়েছেন। আমাদের নাগরিক হয়ে উঠতে দেয়নি। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পরে সুযোগ হয়েছে নাগরিক হয়ে ওঠার।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে সারজিস আলম বলেন, ‘এটা কোনো গুজরাট নয়, এটা বাংলাদেশ। এখানে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা চলে না। এখানে গুজব দিয়ে মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় যাওয়া যায় না। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের সম্পর্ক হতে হবে সম্মানের, সমতার।’

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বিজয় দিবস নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকেও দ্রুত এর প্রতিবাদ জানাতে আহ্বান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদি ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়কে ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয় উল্লেখ করে ফেসবুকের একটি পোস্ট দিয়েছেন।

বাংলার মাটিতে নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান দেখতে পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এস এম শাহরিয়ার। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির ওপর বারবার যারা হামলা করছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। যেখানে হামলা হবে, সেখানেই লড়াই হবে।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক নিজামউদ্দিন ও কেন্দ্রীয় সংগঠক আলী নাসের খান।

সমাবেশের আগে মিছিলে জাতীয় নাগরিক কমিটির হাজারো নেতা, কর্মী ও সমর্থকের উপস্থিতি ছিলেন। তাঁদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, অনেকে মাথায়ও জাতীয় পতাকা বাঁধা ছিল। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। এর মধ্যে ছিল ‘একাত্তর মরে না, চব্বিশ হারে না’; ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’—এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।