সেমিনারে বক্তারা

রাজনীতিবিদদের সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে

‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের একটি কর্ম–অধিবেশনে উপস্থিত আলোচকেরা। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল, ঢাকা, ৮ অক্টোবর
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম সব জায়গা থেকে সব সময় রাজনীতিবিদদের সমালোচনা হয়। একই সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়ানো হয়। সহিংসতার পাশাপাশি জেল ও নির্যাতনের শিকারও তাঁদের হতে হয়। তবে দিন শেষে রাজনীতি একটি দেশের সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই একজন রাজনীতিবিদের সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। বিশেষ করে গণমাধ্যমের সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে।  

আজ রোববার ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের এক কর্ম–অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত তিন দিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ওই কর্ম–অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ‘দ্য ভিউ ফ্রম দ্য টপ: পলিটিক্যাল লিডারশিপ ইন দ্য মডার্ন এজ’ শিরোনামের অধিবেশনে সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরিস তাডিক ও মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মউসা মারা বক্তব্য দেন। সঞ্চালনা করেন জার্মানির সাংবাদিক আলী আসলান।

অধিবেশনে বরিস তাডিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় অংশ তরুণ। রাজনীতিবিদের ওপরে তাদের আকাঙ্ক্ষার চাপ সব সময় থাকবে। তারা বেশি করে রাজনীতির অংশ হতে চাইবে। তবে একজন রাজনীতিবিদের কাজ হওয়া উচিত রাজনীতিতে যাতে বেশি মানুষ অংশ নেয়, সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা। আর সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা রাজনীতিবিদদের মধ্যে থাকতে হবে। কারণ, তাঁদেরকে দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করে সমালোচনা হবে। এটা সারা পৃথিবীতে আছে।

বরিস তাডিক বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদেরা আমার তীব্র সমালোচনা করে। আমিও করি। এমনকি আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কয়েক মাস আগেও তৎকালীন সরকারপ্রধানের সমালোচনা করায় আমাকে প্রায় জেলে চলে যেতে হচ্ছিল। তবে রাজনীতির সবচেয়ে বড় শক্তি আমি দেখেছি। ওই ঘটনার কয়েক মাস পর আমি সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছি। তবে আমি আমার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অনেক সহনশীল থেকেছি।’

একটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং রাজনীতিবিদদের নিজস্ব ধরনের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। এই মন্তব্য করে বরিস তাডিক বলেন, জার্মানি বিশ্বের সেরা সংগীতজ্ঞ, সাহিত্যিক, দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু সেখানে হিটলারের মতো ভয়ংকর রাজনীতিবিদের জন্ম হয়েছে। ফলে রাজনীতিবিদ একটি দেশের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। ফলে রাজনীতিবিদদের গুরুত্ব একটি দেশে সবচেয়ে বেশি।

‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থিত দর্শকদের একাংশ। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল, ঢাকা, ৮ অক্টোবর

আলোচনায় মউসা মারা বলেন, তাঁদের দেশে রাজনীতিবিদের দুর্নীতিবাজ বলা ছাড়াও পশ্চিমা দেশগুলোর দালালও বলা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে অপতথ্য প্রচার করা হয়। তবে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এসব কিছুকে উড়িয়ে না দিয়ে সঠিক জবাব দিতে হবে। সমালোচনাকে আমলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশেষ করে গণমাধ্যমের সমালোচনাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

মউসা মারাকে প্রশ্ন করা হয় কোন কোন বিষয় রাজনীতির অংশ। জবাবে তিনি বলেন, ‘একটি দেশের মানুষের জীবন–জীবিকা, সামাজিক অবস্থা থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন, বিজ্ঞান এই সবকিছু রাজনীতির অংশ। কোনো দেশের রাজনীতি ঠিক না থাকলে ওই দেশ এগোতে পারে না।’