কাউন্সিল নিয়ে অনড় নুরুলের পক্ষ, যাবেন না কিবরিয়ার অনুসারীরা

গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হক
ফাইল ছবি

গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হকের সমর্থকদের ঘোষিত দলের প্রথম কাউন্সিল আগামীকাল সোমবার। দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার পক্ষের নেতা-কর্মীরা কাউন্সিলে অংশ নেবেন না। তাঁরা কাউন্সিল পেছানোর দাবি করেছেন। তাঁরা কাউন্সিলের দিনে বিক্ষোভ কর্মসূচিরও ঘোষণা দিয়েছেন।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নুরুল হকের অনুসারী কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত আছেন। দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন হবে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উচ্চতর পরিষদের আট সদস্য পদে ভোট হবে।

গণ অধিকার পরিষদের শীর্ষ দুই নেতা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হকের বিরোধ থেকে বেশ কয়েক দিন ধরে দলে অস্থিরতা চলছে। দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অব্যাহতি, অনাস্থা প্রস্তাব, অপসারণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ১ জুলাই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নুরুল হকের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা আহ্বায়কের পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন। ওই বৈঠকে ১০ জুলাই জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণাও দেওয়া হয়।

এ ঘটনার ছয় দিন পর গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য ঘোষণা দেন, রেজা কিবরিয়াই দলের আহ্বায়ক আছেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে ১০ জুলাই দলের কাউন্সিলের দিন নির্ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে দলকে ভাঙনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

আজ দুপুরে গণ অধিকার পরিষদের কার্যালয়ে দলের ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খানের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামীকাল কাউন্সিল হবেই। সারা দেশের জেলা ও মহানগর কমিটির নেতা-কর্মীরা আসবেন। দলের মূল স্রোতের সঙ্গে আমরা আছি। যাঁরা কাউন্সিলে অংশ নেবেন না, আগামীকালের পরেই তাঁদের লাফালাফি বন্ধ হয়ে যাবে।’

উল্লেখ্য, গত ১৯ জুনের সভায় মুহাম্মদ রাশেদ খানকে দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ঘোষণা করেন নুরুল হকের অনুসারীরা। পরদিন ২০ জুন রেজা কিবরিয়া দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে সদস্যসচিব ঘোষণা করেন।

কাউন্সিলের বিষয়ে হাসান আল মামুন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে একপক্ষীয় কাউন্সিল দলকে ভাঙনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এমন কিছু হোক তা চাইছি না। এখনো চেষ্টা করছি দুই পক্ষের মধ্যে সমস্যার সমাধান করতে। কাউন্সিল পিছিয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে সমাধান করতে পারলেই কোনো পদে প্রার্থী হব।’

গণ অধিকার পরিষদের দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করা হলেও কোনো সমাধান হয়নি। দুই পক্ষ দলীয় কার্যালয়ে বৈঠকও করেছে। রেজা কিবরিয়ার অনুসারীরা কাউন্সিল পেছানোর দাবি করেছিলেন। কিন্তু নুরুল হকের অনুসারীরা তা মানতে রাজি নন।

সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন করে জনপ্রিয়তা পাওয়া নুরুল হক ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে নুরুল হক ও তাঁর সমমনারা ২০২১ সালের অক্টোবরে গণ অধিকার পরিষদ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দল চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার আগেই দলে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

দলের দুটি কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা

নুরুল হকের সমর্থকেরা কাউন্সিলের মাধ্যমে আগামীকালই কমিটি গঠন করতে বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে রেজা কিবরিয়ার অনুসারীরা বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিকে বহাল রাখতে চান। তাঁরা আলাদা কাউন্সিলের মাধ্যমে পৃথক কমিটি করতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।

এই প্রসঙ্গে নুরুল হক ঘোষিত ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, কেন্দ্রীয় ও জেলার কমিটির ৮০ শতাংশের বেশি সদস্য কাউন্সিলে উপস্থিত থাকবেন। যাঁরা কাউন্সিলে আসবেন না, তাঁরা যদি আলাদা কমিটি করেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। অন্যদিকে রেজা কিবরিয়া ঘোষিত সদস্যসচিব হাসান আল মামুন বলেন, যদি সমঝোতা না হয়, তা হলে পৃথক কমিটিই হবে।

কাউন্সিলের দিনে পৃথক কর্মসূচি

আগামীকাল সকাল ১০টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কাউন্সিল শুরুর কথা জানিয়েছেন নুরুল হকের সমর্থকেরা। আর বেলা ১১টায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন রেজা কিবরিয়ার অনুসারীরা।

বিক্ষোভ সমাবেশের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়েছেন রেজা কিবরিয়ার অনুসারীরা। গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্যসচিব থোয়াই চিং মং স্বাক্ষরিত আবেদনে বলা হয়, গণ অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে ১০ জুলাই বেলা ১১টায় বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি থেকে শুরু হয়ে এই বিক্ষোভ মিছিল পল্টনে জামান টাওয়ার (গণ অধিকারের কার্যালয়) পর্যন্ত চলবে।