আগামীকাল সমাবেশ

‘ভোটাধিকার’ প্রতিষ্ঠায় এক দফা ঘোষণায় বিএনপিসহ বিরোধীরা 

বছরব্যাপী নানা কর্মসূচির পর ‘ভোটাধিকার’ প্রতিষ্ঠাকে চূড়ান্ত লক্ষ্য ধরে এবার সরকার হটানোর ‘এক দফা’ ঘোষণায় যাচ্ছে বিএনপিসহ বিরোধীরা। যেটাকে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপ বলছে দলগুলো। আগামীকাল বুধবার বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোট যুগপৎভাবে এ ঘোষণা দেবে। বিএনপির ঘোষণা আসবে ঢাকার নয়াপল্টনে বড় জনসভার আয়োজন করে। তবে এ যাত্রায় জামায়াত নেই।

বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, ‘এক দফার’ আন্দোলনের যাত্রাকে রাজনৈতিকভাবে অর্থপূর্ণ করতে বুধবারের জনসভায় বিপুল উপস্থিতি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে এক সপ্তাহ ধরে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর, জেলা ও বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে প্রস্তুতি সভা করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সভায় ঢাকা মহানগর ও আশপাশের জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের জনসমাগম বাড়াতে বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে বিএনপি বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। এখন এই চার দাবি বা দফাকে এক করে এক দফার ঘোষণায় যাচ্ছে বিএনপি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের আগে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা এই জনসভাকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ‘মাইলফলক’ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচনের ওপর নজর রাখা আন্তর্জাতিক মহলকে ‘বার্তা’ দেওয়ার উদ্দেশ্য রয়েছে। বিশেষ করে চূড়ান্ত ধাপের এই আন্দোলনকে সরকারের জন্য শেষ ধাক্কা হিসেবে বিবেচনা করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই এক দফার যাত্রা এবং নতুন যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণার দিনটিতে ব্যাপক জনসমাগম করে সাধারণ মানুষকে আন্দোলনে আরও সম্পৃক্ত ও উদ্বুদ্ধ করার বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, সব বিরোধী দল ও জোট একজোটে এক দফার ঘোষণা দিলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এর সাড়া পড়বে।

যদিও গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে বিএনপি বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। এখন এই চার দাবি বা দফাকে এক করে এক দফার ঘোষণায় যাচ্ছে বিএনপি। 

এক দফার কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গতকাল ছয়–দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণ অধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) এবং লেবার পার্টির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে বিএনপি।

এই ঘোষণার ব্যাপারে একমত হয়েছে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো। তবে এই এক দফার ঘোষণা বিএনপি ছাড়া অন্য দল ও জোটগুলো সমাবেশ করে দিচ্ছে না। তারা সংবাদ সম্মেলন করে এক দফার ঘোষণা দেবে। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে, সমমনা জোট প্রেসক্লাবের সামনে, ১২–দলীয় জোট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে, এলডিপি দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে।

এক দফার কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গতকাল ছয়–দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণ অধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) এবং লেবার পার্টির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে বিএনপি। তার আগে ১২–দলীয় জোট, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও বরকতউল্লা বুলু উপস্থিত ছিলেন। আজ মঙ্গলবার নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যজোট নামে একটি মোর্চার সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

চলমান আন্দোলন এমন একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে জাতিকে একটি “ডাক” বা একটি “বার্তা” দেওয়ার সময় এসেছে। আগামী দিনের আন্দোলনে আমরা যৌথভাবে এগিয়ে যাব। আমরা একটি যৌথ ঘোষণা দেব ১২ (জুলাই) তারিখে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

গতকাল বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চলমান আন্দোলন এমন একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে জাতিকে একটি “ডাক” বা একটি “বার্তা” দেওয়ার সময় এসেছে। আগামী দিনের আন্দোলনে আমরা যৌথভাবে এগিয়ে যাব। আমরা একটি যৌথ ঘোষণা দেব ১২ (জুলাই) তারিখে।’

জামায়াতে ইসলামীর একজন দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা সরকার হটানোর এক দফার আন্দোলনে বুধবারের ঘোষণায় থাকছেন না। এই মুহূর্তে তাঁরা ১৫ জুলাই সিলেটের জনসভার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। তা ছাড়া বিএনপির সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব চলছে। বিএনপির সঙ্গে তাঁদের আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত এই দূরত্ব ঘুচবে না।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এই সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে আছি, মাঠে থাকব।’

আজ মঙ্গলবার নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যজোট নামে একটি মোর্চার সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে এক দফার আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি নিয়ে নানা প্রস্তাব দিয়েছেন নেতারা। কর্মসূচির বিষয়ে গত রাতে স্থায়ী কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়েছে। কর্মসূচি চূড়ান্ত না হলেও এক দফা দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। দলের নীতিনির্ধারকেরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়েই গণ-অভ্যুত্থান পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান। তবে এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কঠোর কর্মসূচির দিকে নিয়ে গেলে সে ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার মতও রয়েছে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে।

এই মুহূর্তে বিএনপির ঘোষিত কিছু কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জুলাই খুলনায় ও ২২ জুলাই ঢাকায় ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ রয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশ করছে। এ ছাড়া ১৪ জুলাই নোয়াখালীতে পদযাত্রা করবে কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দল ও মৎস্যজীবী দল। নোয়াখালীর পর ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম, ১৯ জুলাই দিনাজপুর, ২৮ জুলাই রাজশাহী, ৫ আগস্ট যশোর, ১২ আগস্ট হবিগঞ্জ ও ১৯ আগস্ট বরিশালে পদযাত্রা হবে। এসব কর্মসূচির সঙ্গে এক দফা আন্দোলনও চলবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমানে যে যুগপৎ আন্দোলন চলছে, সে আন্দোলনের সব রাজনৈতিক দল-জোটগুলো আগামী ১২ তারিখে নিজ নিজ জায়গা থেকে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের নতুন যাত্রা শুরু করবে।

সরকারের ওপর চাপ বাড়ানো এবং বিদেশিদের রাজনৈতিক শক্তি দেখানো—এই কৌশল নিয়ে বিএনপি বুধবারের সমাবেশে বড় জমায়েত করতে চাইছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন।