আনোয়ার সাদাত জানতেন, দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হবে না। তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীদের নিয়ে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। তাঁরা এসেছেন দেশের সর্ব–উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে।
অদূরেই ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়। সেখানে আজ বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হয় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। আজ এখানে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের মনোনয়নপ্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় এখানে আসেন। তাঁর নেতৃত্বেই দলীয় কার্যালয়ে চলছিল প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার কাজ। সেখানে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রবেশাধিকার নেই। মনোনয়ন পাবেন কি পাবেন না, এই আশা-নিরাশার দোলাচলে পথে অপেক্ষা করেন নেতা–কর্মীরা।
আশপাশের সড়কে কড়া নিরাপত্তা। প্রধানমন্ত্রীর দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশের পর দলীয় প্রার্থী, সমর্থক নেতা–কর্মী ও গণমাধ্যমের কর্মীদের কার্যালয়ের কাছাকাছি এসেনসিয়াল ড্রাগসের কার্যালয় পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়। সেখানে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে বা ফুটপাতে বসে, চায়ের টংদোকানের সামনে নির্বাচন নিয়েই নানা কথাবার্তায় মগ্ন ছিলেন তাঁরা। তবে তাঁদের সংখ্যা খুব বেশি নয়।
এখানেই কথা হচ্ছিল পঞ্চগড়-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রার্থী আনোয়ার সাদাতের সঙ্গে। তিনি বর্তমানে পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এর আগে সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। গতবারও সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। পাননি। এবার পাবেন বলে আশাবাদী। জানালেন, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের জন্য তাঁর অনুরাগী নেতা–কর্মীদের নিয়ে ১৭ নভেম্বর ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলেন, আজ তাঁদের এলাকার মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই। দূর থেকে হয়তো সালাম দেওয়ার সুযোগ হতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় নেতারাসহ অনেক নেতা–কর্মীর সঙ্গে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি কেমন, সেটা জানাবোঝার জন্যই এখানে এসেছেন বলে তিনি জানালেন।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা থেকে এসেছেন তরুণ নেতা ফুয়াদ হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগের জেলার ত্রাণ কমিটির সদস্য। কুড়িগ্রাম-৩ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তিনি জানালেন, মনোনয়ন পাওয়ার আশা আছে। তবে না পেলেও দলের নির্দেশনা মেনে কাজ করবেন। এবার নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি যেন বেশি থাকে, তেমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের কর্মী, সমর্থকেরা যেন ভোটকেন্দ্রে আসেন, নেতাদের সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া সাধারণ ভোটারদেরও কেন্দ্রে আসতে উৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে তাঁদের যাতায়াতের জন্য তাঁরা যানবাহনের ব্যবস্থাও করবেন বলে জানালেন।
যশোর-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন-অর-রশীদ। তিনি ঝিকরগাছা থেকে এসেছেন তাঁর সমর্থকদের নিয়ে। কুষ্টিয়া-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আ ক ম সারওয়ার জাহান এবারও এ আসনে নির্বাচন করতে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। ঝিনাইদহ-৩ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী মেজর জেনারেল (অব.) সালাহউদ্দিন মিয়াজি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব ছিলেন।
এই প্রার্থীদের সমর্থকেরা ফুটপাতে বসে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় মেতে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ঝিনাইদহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম জানালেন, জেনারেল মিয়াজি মনোনয়ন পাবেন বলে তাঁরা আশাবাদী। বর্তমান সংসদ সদস্যও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে নানা কারণে এলাকার জনগণ এবার নতুন মুখ দেখতে চান। সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে, এটা তাঁরা আশা করেন।
কুষ্টিয়ার জেলা কমিটির নেতা সাইফুল ইসলাম বললেন, তাঁরা মনে করেন, বর্তমান সংসদ সদস্য এবারও মনোনয়ন পাবেন। এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা আছে, অনেক কাজ করেছেন। লোকে তাঁকেই চান।
যশোর-২ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী মুক্তিযোদ্ধা হারুন-অর-রশীদ। তিনি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পরিষদের জেলা সভাপতি। পেশাগতভাবে স্থানীয় কলেজে দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছেন। এলাকায় সৎ ও সজ্জন এবং দলে ত্যাগী নেতা বলে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। যাঁরা দীর্ঘদিন নিঃস্বার্থভাবে সততার সঙ্গে দলের হয়ে কাজ করেছেন, এবার তাঁদের মূল্যায়ন করা হবে বলে এই প্রবীণ নেতার বিশ্বাস।
আজ যেসব এলাকার মনোনয়ন যাচাই-বাছাই হয়নি, তেমন এলাকার কিছু নেতা–কর্মীও এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নরসিংদী-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রকৌশলী ড. মাসুদা সিদ্দিক। তিনি নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক। পেশায় গৃহনির্মাণ ব্যবসায়ী। রিহাবের সদস্য। তিনি বললেন, পরিস্থিতি কেমন, দেখার জন্য এখানে এসেছেন। গত নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবার পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। দলের জন্য এলাকায় অনেক কাজ করেছেন। বিশেষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তা ছাড়া নারীদের ক্ষমতায়ন ও নারী নেতৃত্বের প্রতি সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার রয়েছে। এসব কারণে তিনি এবার মনোনয়ন পেতে পারেন। না পেলেও বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা থেকে দলের জন্য কাজ করে যাবেন।