লোক জমায়েতে কিছুটা বাধা দিয়ে বিএনপিকে এটা বোঝানো হচ্ছে যে আওয়ামী লীগ চাইলে সমাবেশ বন্ধ করে দিতে পারে।
আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশে দলের জেলা ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন এবং কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঘিরে বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, বিএনপির বড় জমায়েতে দলের ওপর চাপ বেড়েছে। আওয়ামী লীগও বড় জমায়েতের মাধ্যমে বিএনপির লোকসমাগমের জবাব দিতে চায়।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি ঢাকায় যে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে, এর আগে–পরে আওয়ামী লীগও বড় জমায়েত করবে।
এর মধ্যে গতকাল নারায়ণগঞ্জে দলের জেলা সম্মেলন উপলক্ষে বড় সমাবেশ করেছে। ২৯ অক্টোবর দলের ঢাকা জেলার সম্মেলনের জন্য আগারগাঁওয়ে যে মাঠে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হতো, সেই স্থানকে নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজপথে সব মোকাবিলা হবে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে খেলা হবে।ওবায়দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, নিকট অতীতে ঢাকা জেলার সম্মেলন রাজধানীতে হয়নি। ২০১৭ সালের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে সাভারে। সাধারণত জেলা সম্মেলনে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকেন না। এবার বিএনপির বড় জমায়েতের জবাব দিতে ঢাকা জেলা সম্মেলন রাজধানীতে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। ওই দিন বিপুল মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সব উপজেলার নেতা ও দলের সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে একাধিক বর্ধিত সভা হয়েছে।
গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেট্রোরেলের একটি চুক্তি সই অনুষ্ঠান শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে কিসের পাল্টাপাল্টি। প্রতিদিন আমাদের প্রোগ্রাম হচ্ছে। লাখ লাখ লোক দেখবেন? আসেন। ২৯ তারিখ ঢাকা জেলা সম্মেলন করব, সেখানে আসেন। ফখরুল সাহেবকে (বিএনপির মহাসচিব) বিকেলে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, একটা জেলা সম্মেলনে কত মানুষ হয় দেখার জন্য।’
যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে সংগঠনটি। সেখানে বড় জমায়েত করার লক্ষ্যে গত শনিবার সারা দেশের জেলা–উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে ঢাকায় বর্ধিতসভা করেছে যুবলীগ।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করুক, তা চায় না আওয়ামী লীগ। যদিও বিএনপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের পক্ষ থেকে হামলা–বাধা এসেছে। এরপরও বিএনপি ঢাকাসহ সারা দেশে বিপুল মানুষের উপস্থিতি দেখিয়েছে। কয়েক মাস ধরে গণমাধ্যমের একটা বড় জায়গা দখলে নিয়েছে বিরোধী দলটি; যা গত সাত–আট বছরে ঘটেনি।
এর ফলে সারা দেশের সাধারণ মানুষ, এমনকি বিদেশি কূটনীতিকদের কৌতূহলী করে তুলেছে তারা। আওয়ামী লীগের কর্মীদের মনেও কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কষ্টে থাকা মানুষ বিএনপির ডাকে রাস্তায় নেমে আসে কি না, সেই শঙ্কাও আছে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপিকে আপাতত একেবারে মাঠছাড়া না করে চাপে রেখে কর্মসূচি পালন করতে দেবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি সাংগঠনিক কর্মসূচিতে বড় জমায়েত করে নিজেদের শক্তি দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সমাবেশে লোক জমায়েতে কিছুটা বাধা দিয়ে বিএনপিকে এটা বোঝানো হচ্ছে যে আওয়ামী লীগ চাইলে সমাবেশ বন্ধ করে দিতে পারে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন ও সংগঠন গোছানোর কাজ একসঙ্গে চলবে। আওয়ামী লীগ রাজপথের শক্তি। নেতা–কর্মীরাও নিজেদের মাঠে দেখতে চান। আগামী সম্মেলন ও কর্মসূচিগুলোতে বিপুল মানুষের উপস্থিতি থাকবে।
দিন–তারিখ ঠিক না হলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আগামী ডিসেম্বরে হতে যাচ্ছে। ২৮ অক্টোবর দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হতে পারে। দলীয় সূত্র বলছে, দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে সারা দেশের কাউন্সিলর ও প্রতিনিধি ছাড়াও বিপুল কর্মী–সমর্থককে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাজির করা হবে।
এর আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন হতে পারে। এই প্রক্রিয়া নভেম্বরের শেষ দিকে শুরু হবে; যা চলবে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন পর্যন্ত। এর বাইরে বিজয়ের মাসের কর্মসূচি তো থাকবেই।
আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হচ্ছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও মৎস্যজীবী লীগ। ত্রিবার্ষিক এসব কমিটির সব কটিরই মেয়াদ নভেম্বরে শেষ হবে।
গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘আজ তোমরা বড় বড় কথা বলছ। রাজপথে সব মোকাবিলা হবে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে খেলা হবে।’