সারা দেশে গত ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল করেছে বিএনপি। ৩০ ডিসেম্বর এই কর্মসূচি ঢাকায় পালন করবে দলটি
সারা দেশে গত ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল করেছে বিএনপি। ৩০ ডিসেম্বর এই কর্মসূচি ঢাকায় পালন করবে দলটি

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন

ঢাকায় গণমিছিলের পর নতুন কর্মসূচি আসছে

৩০ ডিসেম্বর বিএনপি নয়াপল্টনে, ১২ দল বিজয়নগরে, গণতন্ত্র মঞ্চ প্রেসক্লাবের সামনে ও এলডিপি পান্থপথ থেকে মিছিল বের করবে।

রাজধানী ঢাকায় যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ‘গণমিছিলের’ মধ্য দিয়ে ঐক্যের যাত্রাকে দৃঢ় করতে চায় বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোট। এরপর তারা নতুন কর্মসূচি দেবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি নয়াপল্টনে, ১২–দলীয় জোট বিজয়নগরে, গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং এলডিপি পূর্ব পান্থপথ থেকে মিছিল বের করবে। পৃথক মিছিল বের করবে জামায়াতে ইসলামীও।

 ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন হয়। দিনটিকে বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে। আর বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ বিভিন্ন দল ‘ভোট ডাকাতির’ প্রতিবাদে দিনটি ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে। এবার দিনটিতে গণমিছিলের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গণমিছিলের পর কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে ভাবছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। তাঁরা মনে করছেন, ঢাকাসহ ১০ বিভাগীয় গণসমাবেশে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আন্দোলনের ব্যাপারে যে উৎসাহ এবং উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেটি ধরে রাখাই এখন তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। এ কারণে গণমিছিলের পর ধারাবাহিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। তবে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে সমমনা দল ও জোটের নেতাদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘১২–দলীয় জোট’ ও ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন বিএনপির লিয়াজোঁ (সমন্বয়) কমিটির নেতারা। বৈঠকে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া এবং রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী পর্যন্ত মানববন্ধন, লংমার্চ, বিভাগীয় সমাবেশ করার মতামত আসে। এ ছাড়া বন্দী মুক্তি কর্মসূচি, ঘেরাও বা অবস্থান কর্মসূচির মতামতও এসেছে অন্য দল থেকে।

বৈঠক শেষে ১২–দলীয় জোটের গণমাধ্যম সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন (সেলিম) প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মানববন্ধন, লংমার্চ, বিভাগীয় সমাবেশ করার প্রস্তাব করেছেন। এ ছাড়া ৩০ ডিসেম্বর ১২–দলীয় জোট বিজয়নগর এলাকা থেকে গণমিছিল বের করে শান্তিনগরের দিকে যাবেন।

আজ বুধবার সাত–দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নেতাদের বৈঠক আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গণতন্ত্র মঞ্চের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি ইতিমধ্যে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে। তারা জেলা পর্যায়ে শোভাযাত্রা বা সমাবেশ করার প্রস্তাব দেবেন।

বিএনপিসহ সংশ্লিষ্ট দল এবং জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০ ডিসেম্বর বেশির ভাগ দল জুমার নামাজের পর গণমিছিল বের করবে। এর আগে দলগুলোর নেতা-কর্মীরা নির্দিষ্ট এলাকায় জমায়েত হয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিএনপি রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গণমিছিল বের করবে। এরপর কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার হয়ে বাংলামোটর গিয়ে মিছিল শেষ হবে। বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ গণমিছিল হবে। গণতন্ত্র মঞ্চ বেলা ১১টায় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল বের করবে।

জানা গেছে, গণমিছিলের কর্মসূচি সামনে রেখে ১২–দলীয় জোটের পর ২০-দলীয় জোটের ছয়টি দল মিলে ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ গঠন করা হয়েছে। আজ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এর আত্মপ্রকাশ হবে। এই জোটে থাকছে ফরিদুজ্জামান ফরহাদের ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), সাইফুদ্দীন মনির ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল), খন্দকার লুৎফর রহমানের জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) একাংশ, সাদেক শাওনের বাংলাদেশ ন্যাপ, আজহারুল ইসলামের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী) ও গরীবে নেওয়াজের বাংলাদেশ পিপলস লীগ।

গণমিছিলের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি

গণমিছিলের কর্মসূচির বিষয়ে কথা বলতে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির দুজন নেতা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করেছেন। সাক্ষাৎ শেষে প্রতিনিধিদলের প্রধান ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কর্মসূচি যেন শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খলভাবে করা যায়, সে জন্য গণমিছিলের যে রাস্তা, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গণমিছিলের কর্মসূচি পছন্দ অনুযায়ী রাস্তায় করার বিষয়ে ডিএমপির সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপিকে গণমিছিল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। তবে কর্মসূচি যেন শান্তিপূর্ণ হয়, কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে বলা হয়েছে। গণমিছিলের রাস্তাও তাঁদের সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে থেকে গণমিছিল করার অনুমতি চেয়ে ডিএমপি কমিশনার বরাবর গতকাল একটি আবেদন অনলাইনে পাঠিয়েছেন। অনুমতি পেলে তাঁরা বায়তুল মোকাররম থেকে গণমিছিল করবেন।

বর্তমান সরকারকে সরাতে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি পরিচালনার জন্য লিয়াজোঁ (সমন্বয়) কমিটি করেছে বিএনপিসহ সমমনা বিভিন্ন দল ও জোট। বিএনপি, এলডিপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ নিজ নিজ দল ও জোটের পক্ষ থেকে লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেছে। এখনো লিয়াজোঁ কমিটি করেনি নবগঠিত ‘১২-দলীয় জোট’। দু-এক দিনের মধ্যে তারা কমিটি গঠন করবে বলে জানা গেছে।

১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করে ২৪ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে গণমিছিলের কর্মসূচি দেয় বিএনপি। ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে এ কর্মসূচি পালিত হয়। তবে ওই দিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন থাকায় ঢাকার কর্মসূচি ৩০ ডিসেম্বর করা হয়। আজ ঢাকা ও রংপুর মহানগরে গণমিছিল হবে। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে ২৪ ডিসেম্বর রংপুরের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর সঙ্গে কর্মসূচি সমন্বয়ের জন্য গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর “ভোট ডাকাতির” দিবস। আমরা সেদিন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতাম। এখন আমরা গণমিছিলের মাধ্যমে দুটি কর্মসূচি একসঙ্গে পালন করব।’

বিএনপির এই নেতা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, এই গণমিছিল কর্মসূচি ছিল পূর্বঘোষিত। কিন্তু আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য বিএনপি কর্মসূচি পিছিয়ে দিয়েছে। অথচ এই কর্মসূচি সামনে রেখে পুলিশ গত কয়েক দিন ধরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন শুরু করেছে।