পুলিশের সঙ্গে বিএনপির দুই দফা বৈঠক। নয়াপল্টনে বিএনপি অবস্থান কর্মসূচি শুরু করতে পারে, আশঙ্কা পুলিশের।
১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করার বিষয়ে বিএনপি এখনো নয়াপল্টনই চায়। সেটা না হলে পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বিকল্প কোনো ভালো জায়গার প্রস্তাব করলে বিএনপি সেটাও বিবেচনা করবে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।
বিএনপি সূত্র জানায়, সমাবেশের জন্য বিকল্প হিসেবে মতিঝিল ও এর আশপাশের এলাকা দলটির অগ্রাধিকার। তবে টঙ্গী, পূর্বাচল বা রাজধানী থেকে দূরের কোনো স্থানের প্রস্তাব এলে, সেটা মেনে নেবে না বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে।
সমাবেশের জন্য নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে তৃতীয় কোনো স্থানের বিষয়টি গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের আলোচনায়ও এসেছে বলে জানা গেছে। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে এই বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে ছিলেন দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন (আলাল), কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি) ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ। পুলিশের পক্ষ থেকে আরও ছিলেন ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ ও মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খানসহ আরও দুজন কর্মকর্তা।
বৈঠক-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করার জন্য অনুরোধ করে, একই সেখানে নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। বিএনপির প্রতিনিধিদল জানায়, তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে অনিরাপদ মনে করে। তারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চায় বলে দলের অবস্থান তুলে ধরে। বৈঠকে একপর্যায়ে নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে তৃতীয় কোনো স্থানে সমাবেশ করার ব্যাপারে বিএনপি আলোচনা করতে রাজি হয়। এই পর্যায়ে আলোচনায় ঠিক হয় যে বিএনপির পক্ষ থেকে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এবং পুলিশের পক্ষ থেকে মতিঝিল বিভাগে উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান আজ সোমবার সম্ভাব্য তৃতীয় স্থানের বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রস্তাব করবেন।
সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে মতিঝিল বিভাগে উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে দুই পক্ষের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের জন্য তৃতীয় স্থান বা বিকল্প কী হতে পারে, সে বিষয়ে আজ সোমবার সরেজমিনে পরিদর্শন করা হবে। তারপর আলোচনা হতে পারে।
এর আগে গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায় ওই বৈঠক শেষে বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা সমাবেশের জন্য নয়াপল্টনের দাবিতেই আছেন। পুলিশের অনুমতি দেওয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবেন না। তবে তৃতীয় কোনো স্থান নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সে জন্য শহীদ উদ্দীন চৌধুরী ও পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরে বৈঠক করবেন। তিনি বলেন, বিএনপি নয়টি বিভাগীয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করেছে। কোনো বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। ঢাকায় নয়াপল্টনের অনুমতি দিলেও সেখানে কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না বলে তারা পুলিশকে আশ্বস্ত করেছে।
ওই বৈঠকের পর গতকাল রাত নয়টার দিকে নয়াপল্টনের একটি হোটেলে বিএনপির নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরীর সঙ্গে পুলিশের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান আবার বৈঠক করেন। প্রায় এক ঘণ্টার এই বৈঠক শেষে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে ঘুরেফিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কথাই বলা হয়েছে। পুলিশের আশঙ্কা নয়াপল্টনে সমাবেশের পর নেতা-কর্মীরা বসে পড়তে পারেন বা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করতে পারেন। এমন আশঙ্কা নিয়ে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে বলেও জানানো হয়।
আবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে যে বিএনপি অনিরাপদ মনে করে, সেটা পুনরুল্লেখ করেন বলে জানান শহীদ উদ্দীন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি সামান্য জিনিসে ভয় পেলে তো হবে না। আমরা দায়িত্ব নিচ্ছি নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ হবে। এ পর্যন্ত নয়টি গণসমাবেশ করেছি। আইন অমান্য করে কিছু করিনি। আমরা কোনো সাংঘর্ষিক অবস্থায় যাব না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিকল্প হিসেবে ভালো জায়গা থাকলে বিবেচনা করব। পুলিশ বলেছে তারা কাল (আজ সোমবার) জানাবে।’
এর আগে বেলা দুইটার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঢাকার সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে। অযথা এটাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশের জন্য বিকল্প স্থানের প্রস্তাব দিলে গ্রহণ করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেটাও আমরা চিন্তা করব।’ এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিকল্প প্রস্তাব যদি গ্রহণযোগ্য হয়, তবে অবশ্যই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা তুরাগ নয়।