প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে নাশকতার ৮১০৫ মামলা, বিচার হয়েছে ১৯৬৭টির

বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সাল এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সারা দেশে মোট ৮ হাজার ১০৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৬৭টি মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব মামলায় ১ হাজার ২৪১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে আজই প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ অধিবেশন চলাকালে প্রতি বুধবার আধা ঘণ্টা নির্ধারিত থাকে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরের জন্য। শেখ হাসিনা জানান, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে করা মামলাগুলোর বিষয়ে তদন্ত চলছে।

এর আগে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য শাজাহান খান তাঁর প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী মামলা–সংক্রান্ত ওই সব তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিএনপি ও তার দোসররা নির্বাচন প্রতিহতের নামে অযৌক্তিক ও জনসম্পৃক্ততাহীন আন্দোলনের মাধ্যমে আগুন-সন্ত্রাস, নিরীহ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যা এবং জনগণের সম্পদ বিনষ্ট করার অশুভ খেলায় মেতে উঠেছে। এই অশুভ শক্তি শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানকেই অস্বীকার করছে না, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষার যে জনবান্ধব ধারার সৃষ্টি হয়েছে, তা বানচাল করে অতীতের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চাইছে। বাংলাদেশকে তারা আবারও উগ্র জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-লুটপাটের সেই দুঃসহ দিনগুলোতে ফিরিতে নিতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী জানান, আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের ‘সন্ত্রাসীদের’ হাতে গাড়ির চালক, চালকের সহকারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সাধারণ মানুষসহ ১৮৮ জন নিহত হন। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন ৪ হাজার ৯৭৩ জন।

‘নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্র ছিল’

সংসদে প্রথম প্রশ্নের জবাব দিতে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল, চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র ছিল। সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন।’ এ জন্য তিনি জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানান। ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচন অনুষ্ঠান করায় নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা সংস্থা, সশস্ত্র বাহিনী, জনপ্রশাসন ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

সরকারের অগ্রযাত্রায় দেশের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন ও অবিচল আস্থা রয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, কোনো অপশক্তিই বাংলাদেশের এ গণতান্ত্রিক ধারার উন্নয়ন অভিযাত্রার পথকে রুদ্ধ করতে পারবে না। আপামর জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে সরকার দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মর্যাদাকে সমুন্নত রেখেছে। ভবিষ্যতেও রাখবে।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা, সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম ও গঠনমূলক পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ গত ১৫ বছরে সব ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা আগামী পাঁচ বছরেও অব্যাহত রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর।

লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. আবদুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা অগ্নিসংযোগ, হরতাল ও অবরোধের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে সারা দেশে সহিংস ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা, ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলা ও ফিশপ্লেটের ক্ষতিসাধন, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বিভিন্ন নাশকতামূলক ও অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা জনগণের জীবন ও সম্পদের বিপুল ক্ষতিসাধন করে।

শেখ হাসিনা জানান, গত বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে সহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশে ৬০০-এর বেশি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। ১৮৪টি যাত্রীবাহী বাস, ৪৮টি ট্রাক, ২৮টি কাভার্ড ভ্যান/মালবাহী লরি, ৩টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৪টি প্রাইভেট কার, ১১টি পিকআপ, ৫টি ট্রেন, ১৫টি মোটরসাইকেল, ৩টি লেগুনা, ১টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস, ১টি অটোরিকশা, ১টি উচ্চবিদ্যালয়, ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি বসতঘর, ১টি বৌদ্ধমন্দির, ১টি নৌকাসহ ৩২৮টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

‘নির্বাচন কমিশন কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে’

ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশনে পরিণত হয়েছে। সরকারের পদক্ষেপ এবং উদার ও গণতান্ত্রিক মনোভাব, আইনের শাসনের প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধাশীল থাকার কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় গত ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বের ৪৮টি দেশের রাষ্ট্র/সরকারপ্রধান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। ২৫টি আন্তর্জাতিক সংস্থা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশকে অভিবাদন জানিয়েছেন।

‘আমরা এখন অতটা খারাপ নেই’

বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হকের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার ফলে কিছু খরচের ব্যাপারে মিতব্যয়ী হতে হয়েছে, কিছু সংকুচিত করতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন অতটা খারাপ নেই। ডলারের সংকট যথেষ্ট ছিল, এখন ঠিক সে রকম সংকট নেই। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা মনিটরিং বাড়িয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে এলসি খোলার নামে যতটা প্রয়োজন নয়, তার চেয়ে বেশি দিয়েও অনেকেই এলসি খোলে, কিন্তু ওই টাকাটা ফেরত আসে না। এ কারণে সরকার পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ব্লুমবার্গের মূল্যতালিকা দেখে; সেটা মনিটর করে এলসি খুলতে দেওয়া হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এলসি খুলতে যে অসুবিধার কথা বলা হচ্ছে তা নয়, আগে যেভাবে যখন-তখন এলসি খোলা যেত, এখন ইচ্ছেমতো হচ্ছে না, সেটা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। রপ্তানি আয় বাড়ানো এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।