জাতীয় সংসদ নির্বাচন

লম্বা সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করতে চায় নির্বাচন কমিশন

এবার তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত দুই মাসের মতো সময় রাখতে চায় নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন ভবন
ফাইল ছবি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলে লম্বা সময় রাখতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণ করা হয়। এবার তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত দুই মাসের মতো সময় রাখতে চায় ইসি।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তফসিলে লম্বা সময় রাখা হলে একধরনের ঝুঁকি থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে মাঠপর্যায়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রার্থীদের আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করা ইসির জন্য কঠিন হতে পারে।

অবশ্য ইসি সূত্র বলছে, বর্তমান কমিশন মূলত মনোনয়নপত্র বাছাই ও আপিলের জন্য বেশি সময় রাখতে চায়। তারা মনে করছে, আপিল শুনানির জন্য সাধারণত যে সময় রাখা হয়, তা পর্যাপ্ত নয়। এ ক্ষেত্রে এক সপ্তাহের মতো সময় রাখতে চায় ইসি। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রেও এবার আগের চেয়ে বেশি রাখার চিন্তা আছে।

লম্বা সময় রেখে তফসিল দেওয়া হলে ঝুঁকি থাকবে। দুই মাস ধরে পুলিশ ও প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ভোটের মাঠ নজরদারিতে রাখা কঠিন হবে।
এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার

জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। চলতি সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিন; অর্থাৎ আগামী ১ নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। তবে ভোটের তফসিল কবে ঘোষণা করতে হবে, এ বিষয়ে আইনে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই।

নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর ভোট হবে আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।

ইসি সূত্র জানায়, নভেম্বরের প্রথম দিকে তফসিল ঘোষণা করে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণ করার চিন্তা করছে ইসি। অবশ্য এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

জাতীয় নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিন থেকে ভোটের দিনের মধ্যে অন্তত ১৫ দিন সময় রাখতে হবে। নির্বাচনের তফসিল বা সময়সূচিতে সাধারণত যে বিষয়গুলো উল্লেখ থাকে সেগুলো হলো মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময়, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ও ভোট গ্রহণের তারিখ। রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে যদি কোনো প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়, তাহলে তিনি চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন। সংসদ নির্বাচনে আপিল কর্তৃপক্ষ হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এই আপিল নিষ্পত্তির জন্যও একটি সময় রাখা হয়। সাধারণত তিন-চার দিন এই সময় রাখা হয়।

ইসি সূত্র জানায়, এর আগে সংসদ নির্বাচনগুলোতে তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ভোট গ্রহণের মধ্যে ৪০-৪৫ দিন সময় রাখা হয়েছিল। অবশ্য কয়েকটি নির্বাচনে কয়েকবার ভোটের তারিখ পেছানোর কারণে সময় বেড়েছিল।

নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের তফসিলে সচরাচর যে সময় দেওয়া হতো, এবার তা থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টি আলোচনায় আছে। বিশেষ করে রিটার্নিং অফিসারসহ অন্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সব কর্মকাণ্ড ও প্রশিক্ষণ এবং প্রার্থীদের আপিল শুনানিতে তাড়াহুড়া না করে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য ধাপে ধাপে যুক্তিযুক্ত সময় দেওয়া এবং বাস্তবতার নিরিখে কার্য সুসম্পন্ন করতে যত সময় লাগবে, তা নির্ধারণ করে তফসিল চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন।

ইসি সূত্র জানায়, এর আগে সংসদ নির্বাচনগুলোতে তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ভোট গ্রহণের মধ্যে ৪০-৪৫ দিন সময় রাখা হয়েছিল। অবশ্য কয়েকটি নির্বাচনে কয়েকবার ভোটের তারিখ পেছানোর কারণে সময় বেড়েছিল। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর। মাঝখানে ৪৫ দিন সময় রেখে ভোটের তারিখ ছিল ২৩ ডিসেম্বর। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে ভোটের তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়েছিল।

দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ভোট গ্রহণের মধ্যে সময় ছিল ৪০ দিন। এর আগে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর। প্রথমে ভোটের তারিখ ঠিক করা হয়েছিল তফসিল ঘোষণার ৪৭ দিন পর, ১৮ ডিসেম্বর। রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভোটের তারিখ পিছিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর করা হয়েছিল।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সময় একটি দল নির্বাচনে আসবে, এমন সিদ্ধান্ত হওয়ার পর ভোটের তফসিল পরিবর্তন করা হয়েছিল। এবারও এমন হতে পারে, সে রকম চিন্তা থেকে হয়তো লম্বা সময় দিয়ে তফসিল দেওয়ার কথা ইসি চিন্তা করে থাকতে পারে। কিন্তু লম্বা সময় রেখে তফসিল দেওয়া হলে ঝুঁকি থাকবে। দুই মাস ধরে পুলিশ ও প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ভোটের মাঠ নজরদারিতে রাখা কঠিন হবে। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, ভোটের আগে বিরোধী পক্ষের নেতা-কর্মী, সম্ভাব্য এজেন্টদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এগুলো ইসি কীভাবে সামলাবে, তা চিন্তা করতে হবে। অন্যদিকে তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটের দিনের মধ্যে লম্বা সময় রাখা হলে প্রার্থীদের ব্যয়ও বাড়বে। এতে কালো টাকার ব্যবহার বাড়তে পারে।