প্রায় দেড় মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) কয়েক ঘণ্টা চিকিৎসা দেওয়ার পর আবার কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বেলা দুইটার দিকে খালেদা জিয়াকে সিসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হয়।
এর আগে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। তাঁর শারীরিক কিছু জটিলতা বেড়ে যাওয়ায় মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে কেবিন থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। বেলা দুইটায় আবার তাঁকে সিসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হয়। এখন চিকিৎসকেরা কেবিনে রেখেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিচ্ছেন।
এর আগে গত রোববার খালেদা জিয়াকে কেবিন থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরদিন সোমবার তাঁকে আবার কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
চিকিৎসক জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না। সে কারণে অল্প সময়ের ব্যবধানে তাঁকে দুই দফায় সিসিইউতে নিতে হয়।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন। ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদ্রোগে ভুগছেন। তাঁর পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা।
২০২১ সালের এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা অসুস্থতার কারণে তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা হয়। সেদিন থেকে তিনি কারাবন্দী হন। পরে হাইকোর্টে এ সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আরও সাত বছরের সাজা হয়।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। সেই থেকে তিনি গুলশানের বাড়িতেই ছিলেন। সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে মুক্তির শর্তাবলিতে দেশেই চিকিৎসার কথা বলা হয়। এ কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার আবেদন-নিবেদনের পরও সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাচ্ছে না।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে উত্তরায় এক সমাবেশে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘সংকটজনক’ জানিয়ে দ্রুত তাঁকে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, দেশনেত্রীর যদি সুচিকিৎসা না হয়, তাঁকে যদি বিদেশে পাঠানো না হয়, চিকিৎসার জন্য আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।’
খালেদা জিয়া ‘জীবন-মরণ’ সমস্যায় বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি শুধু একজন বন্দী নন, এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক নম্বর নেত্রী। একবার নয়, তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, দুবার বিরোধীদলীয় নেত্রী। এখনো কারাগারে থেকে এই অসুস্থ অবস্থায় ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন। এই নেত্রীকে আজ তারা বন্দী রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
কারাবন্দীদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দৃষ্টান্ত আছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সব বন্দীকে চিকিৎসা দিতে হবে, প্রয়োজনে বিদেশে পাঠাতে হবে। এ রকম অনেক নজির আছে। আ স ম আবদুর রবকে জিয়াউর রহমান জার্মানিতে পাঠিয়েছিলেন কারাগার থেকে।