কেন্দ্রে সবার এজেন্টকে থাকতে দিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতো, বলছেন পরাজিতরা

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টানানো উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের পোস্টার
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরা কেন্দ্র থেকে তাঁদের এজেন্ট বের করে দেওয়া, গোপন কক্ষে ঢুকে বাটন টেপা, ইভিএম বাইরে নিয়ে যাওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন।

এই প্রার্থীরা বলছেন, অনেক কেন্দ্রে শুধু নৌকা প্রতীকের বিজয়ী প্রার্থীর এজেন্টদের আধিপত্য ছিল। অন্যদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সব কেন্দ্রে সবার এজেন্ট উপস্থিত থাকতে দিলে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতো বলে মনে করেন তাঁরা। তবে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, অন্য প্রার্থীদের এজেন্টরা কেন্দ্রেই উপস্থিত হননি।  

গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম বিপুল ভোটে জয়ী হন। নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থীই পেয়েছেন ১৫ শতাংশ। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মিজানুর রহমান ও কাজী আয়েশা ফারজানা বাকি ভোট পান। এ দুই প্রার্থীই কেন্দ্রে তাঁদের এজেন্ট ঢুকতে না দেওয়া, গোপন কক্ষে নৌকার অনুসারীদের বাটন টিপে দেওয়া, সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদানসহ নানা অভিযোগ করেছেন।

অনেক কেন্দ্রে নৌকা ছাড়া অন্য কারও এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন না। তাঁরা যাননি। না গেলে আমাদের করার কিছু নেই।
নুরুল ইসলাম, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা

বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে মাত্র তিনটি কেন্দ্রে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাদা এস এম মিজানুর রহমান এগিয়ে ছিলেন। এ তিনটিসহ প্রায় আটটি কেন্দ্রে তাঁর এজেন্টরা উপস্থিত ছিলেন। বাকি কেন্দ্রগুলোতে এজেন্ট ছিলেন না। ওই সব কেন্দ্রে ছিল নৌকার অনুসারীদের একচেটিয়া আধিপত্য।

নৌকার প্রতীক-সংবলিত কার্ড ঝুলিয়ে গোপন বুথে ভোটারের সঙ্গে ঢুকে পড়েন লোকজন। বেলা একটায় জ্যেষ্ঠপুরা ইসলামিয়া হামিদিয়া মাদ্রাসায়

মিজানুর রহমান বলেন, ‘যদি এজেন্ট থাকত, তাহলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। যেসব কেন্দ্রে আমার এজেন্ট ছিলেন, সেখানকার তিনটিতে আমি জিতেছি। বাকিগুলোতে নৌকার কাছাকাছি ভোট পেয়েছি। সাত-আটটি কেন্দ্রে এজেন্ট শেষ পর্যন্ত ছিলেন। অনেক কেন্দ্রে ভয়ে এজেন্ট বসেননি।’

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম বিপুল ভোটে জয়ী হন। নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। নৌকার প্রার্থীই পেয়েছেন ১৫ শতাংশ।

নিজের কেন্দ্র কধুরখীল সিকদারিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিজানুর রহমানের আনারস প্রতীক ৫০৫ ভোট পায়। নৌকা পায় ২১৫ ভোট। এই কেন্দ্রে নির্বাচনের দিন বেলা সাড়ে তিনটায় গিয়ে দেখা যায়, নৌকার অনুসারীরা কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। পাশাপাশি আনারস প্রতীকের এজেন্ট ও অনুসারীরা আছেন।

এ ছাড়া পশ্চিম কধুরখীল স্কুল ও উত্তর গোমদণ্ডী উচ্চবিদ্যালয়েও আনারস প্রতীক জিতেছে। এ ছাড়া আরও পাঁচটি কেন্দ্রে কাছাকাছি অবস্থানে ছিল নৌকা ও আনারস।

নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই কেন্দ্রে তাঁদের এজেন্ট ঢুকতে না দেওয়া, গোপন কক্ষে নৌকার অনুসারীদের বাটন টিপে দেওয়া, সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদানসহ নানা অভিযোগ করেছেন।

দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী কাজী আয়েশা ফারজানা বলেন, নির্বাচনে নৌকার অনুসারীরা প্রতিটি কেন্দ্রে গোপন কক্ষে ঢুকে বাটন টিপে দিয়েছেন। এ কারণে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

৮৬ কেন্দ্রের মধ্যে ১৫টিতে ভোট পড়েছে ১০ শতাংশ বা এর কম। এ ছাড়া তিনটি কেন্দ্রে ছিল ৬ শতাংশ বা এর কম। পাঁচটি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বাড়ির কাছের কেন্দ্র শ্রীপুর দরবারিয়া দিঘির পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। রেজাউল করিমের ইউনিয়ন শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নের কেন্দ্রগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভোট গ্রহণ হয়েছে।

রেজাউল করিম নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাকে ম্যান্ডেট দিয়েছে। সুন্দর একটি নির্বাচন হয়েছে।’

পরাজিত প্রার্থীদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক কেন্দ্রে নৌকা ছাড়া অন্য কারও এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন না। তাঁরা যাননি। না গেলে আমাদের করার কিছু নেই।’