সমঝোতার ২৬ আসনের ১৬টিতে চিন্তিত জাতীয় পার্টি

জাতীয় পার্টি
জাতীয় পার্টি

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় ২৬ আসন পেয়েও স্বস্তিতে নেই সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। কারণ, আওয়ামী লীগ আসন ছাড়লেও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন।

অন্তত তিনটি আসনে জাপার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মাঠে আছেন দলটিরই মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা। ফলে সব মিলিয়ে অর্ধেকের বেশি আসনেই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে যাচ্ছেন জাপার প্রার্থীরা।

জাপা ও স্থানীয় সূত্র বলছে, সমঝোতার আসনগুলোর বাইরে জাপার প্রার্থী থাকলেও জয়ের সম্ভাবনা নেই। সমঝোতায় পাওয়া আসনের মধ্যেও ১০টিতে কিছুটা সুবিধাজনক জাপার প্রার্থীরা। বাকিগুলোয় চাপ রয়েছে।

আসন ভাগাভাগিতে এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন পেয়েছেন জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার করলেও স্বস্তি পাওয়ার সুযোগ নেই রেজাউলের।

কঠিন পরীক্ষা জাপার প্রার্থীদের

আসন ভাগাভাগিতে এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন পেয়েছেন জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার করলেও স্বস্তি পাওয়ার সুযোগ নেই রেজাউলের। এখানে শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি মো. মঈন উদ্দিন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রায় সবাই তাঁর সঙ্গে নেমেছেন। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া প্রায় ৮৪ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। সেবারও মঈন উদ্দিন স্বতন্ত্র নির্বাচন করে ভোট পান প্রায় ৭৬ হাজার। এ ছাড়া রেজাউল ইসলামের শ্বশুর জাপার সাবেক সংসদ সদস্য জাপার জিয়াউল হক মৃধাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

ঢাকা-১৮ আসনটি শেষ মুহূর্তের জাপার ভাগে পড়ে এবং দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদের প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিব হাসান সরে গেলেও স্বস্তি মিলছে না শেরিফার। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। ফলে প্রথমবার ভোট করে শেরিফা কাদের লাঙ্গল নিয়ে কতটা নৌকার ভোট টানতে পারবেন, সেটাই বড় প্রশ্ন।

জাপা একার শক্তিতেই জয়ী হওয়ার মতো কিছু আসন রয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এর প্রায় সব কটিই রংপুর বিভাগের। এর মধ্যে রয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীর গাইবান্ধা-১ আসন। এখানে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।

রংপুর-১ আসনে জি এম কাদেরের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে পারেন। কারণ, এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন জাপার সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান ওরফে রাঙ্গা। এ আসনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী গঙ্গাছড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান।

নীলফামারী-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রানা মোহাম্মদ সোহেলের বিপরীতে রয়েছেন পাঁচজন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর চারজনই আওয়ামী লীগের। এর বাইরে জাপার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী ফারুক কাদেরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

প্রায় একই ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে নীলফামারী-৪ আসনে জাপার বর্তমান সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমানকে। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিন। তিনি সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে প্রার্থী হয়েছেন।

গাইবান্ধা-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আব্দুর রশীদ সরকারের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে থাকছেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে ভোটে নামা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ার কবীর। জাতীয় পার্টি সহজে ছাড় পাবে না বলেই মনে করছেন অনেকে।

সাতক্ষীরা-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আশরাফুজ্জামানের জন্য লড়াই কঠিন করে তুলেছেন এই আসনের আওয়ামী লীগের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এনছান বাহার বুলবুল।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জোরালো

পিরোজপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. মাশরেকুল আজমের মুখোমুখি হবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকা জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী। এ ছাড়া এ আসনে আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা প্রার্থী মো. আশরাফুর রহমানের বড় ভাই ব্যবসায়ী মো. শামীম শাহনেওয়াজ।

ময়মনসিংহ-৮ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ফখরুল ইমামকে লড়তে হবে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া মাহমুদ হাসানের বিরুদ্ধে। মাহমুদ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও।

মানিকগঞ্জ-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল আলমের প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন মাহমুদ।

সংরক্ষিত সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর সঙ্গে লড়তে হবে হবিগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরীকে। ফেনী-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সাবেক সংসদ সদস্য রহিম উল্লাহ।

চট্টগ্রাম-৫ আসনে জাপার কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী।

বরিশাল-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আতিকুর রহমান।

বগুড়া-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বর্তমান সংসদ সদস্য। এবার তাঁর বিপক্ষে স্বতন্ত্র ভোট করছেন বিএনপির সাবেক নেত্রী বিউটি বেগম।

শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই ১০ প্রার্থীর

জাপা একার শক্তিতেই জয়ী হওয়ার মতো কিছু আসন রয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এর প্রায় সব কটিই রংপুর বিভাগের। এর মধ্যে রয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীর গাইবান্ধা-১ আসন। এখানে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।

আরও যেসব আসন জাতীয় পার্টির বলে পরিচিতি আছে, সেগুলোয় সমঝোতার মাধ্যমে প্রার্থী হয়েছেন ঠাকুরগাঁও-৩ (হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ), রংপুর-৩ (জি এম কাদের) কুড়িগ্রাম-১ (এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান), কুড়িগ্রাম-২ (পনির উদ্দিন আহমেদ), পটুয়াখালী-১ (এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার), বগুড়া-৩ (নূরুল ইসলাম তালুকদার), ময়মনসিংহ-৫ (সালাহ উদ্দিন আহমেদ), কিশোরগঞ্জ-৩ (মুজিবুল হক চুন্নু) ও নারায়ণগঞ্জ-৫ (এ কে এম সেলিম ওসমান)।