আওয়ামী লীগ নতুন করে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রোববার রাজধানীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এবং জেলা ও মহানগরে জমায়েত করবে দলটি। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট যাঁরা নিহত হয়েছেন এবং সাম্প্রতিক সহিংসতায় যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের স্মরণে সোমবার বেলা তিনটায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোকমিছিল করবে আওয়ামী লীগ।
আজ শনিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অন্যদিকে আমরা কোনো রকম মুখোমুখি অবস্থানে জড়াতে চাই না। সে কারণে সংঘাত হতে পারে, তাই আমরা এ ধরনের প্রোগ্রাম এড়িয়ে চলেছি। গতকাল (শুক্রবার) এবং আজকেও (শনিবার) আমাদের নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতির অভিভাবক। ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তিনি বসতে চান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংঘাত এড়াতে পক্ষ-বিপক্ষ হতে পারে, পাল্টাপাল্টি হতে পারে এমন কর্মসূচি এড়িয়ে চলছে আওয়ামী লীগ।
বিভেদ নয়, ঐক্যে বিশ্বাসী দাবি করে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, যাঁরা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও প্রগতিতে বিশ্বাস করেন, তাঁদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চান তাঁরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে দেশের অর্জিত গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সবার সম্মিলিত সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।
অবুঝ শিশুরা কোনো রাজনৈতিক বিবেচনায় পড়ে না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অবুঝ শিশুর তাজা প্রাণ ঝরিয়ে আমাদের দলের কোনো লাভ নেই। লাভ তাদের, যারা এ শিশুর লাশ থেকে ফায়দা লুটতে চায়।’
বিশ্ব সংস্থা ইউনিসেফের উদ্দেশে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, ‘যে ৩২ জন শিশু হত্যার কথা তারা বলছে, আমরা সেই শিশুদের নাম, ঠিকানাসহ জানতে চাই। এটা পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। সত্য খুঁজে বের করুন।’
শুক্রবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সহিংসতা হয়েছে, এর সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়িত নয় উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন গুজব ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেশবিরোধী একটা মহল চলমান সংকট জিইয়ে রেখে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বেহাত হয়ে গেছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে এবং দেশকে খাদের কিনারায় নিয়ে যেতে চায়, এ অশুভ শক্তির তৎপরতা আমরা সফল হতে দিতে পারি না। আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার) শতভাগ। আমরা শিক্ষার্থীদের নিকট দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি। তারা আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন। দেশটি আমাদের। কোনো পক্ষকে বাদ দিয়ে নয়। বরং সবার সম্মিলিত প্রয়াসে এগিয়ে যাবে আমাদের এ বাংলাদেশ।’
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা অফিশিয়াল সেটা বলি নাই। আমাদের যোগাযোগের সাধ্যমতো চেষ্টা আছে। যখন যোগাযোগটা হবে, তখন আপনারা দেখতে পাবেন, জানতে পাবেন। এখানে কোনো রাখঢাকের বিষয় নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন আলোচনার দরজা খোলা। কাজেই বিভিন্নভাবে যোগাযোগ হতে পারে।’
তারা আলোচনা না করলে আওয়ামী লীগ কী করবে এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নেগেটিভে যাব কেন? দরজা খোলা রাখছি।’
রোববার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি বলে দিয়েছি। এ জন্য আমরা জমায়েত করছি।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।