আওয়ামী লীগ কেন আসন ছেড়েছে, তারাই (আওয়ামী লীগ) ভালো বলতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক। জাপা সহনশীল বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা রাস্তাঘাট বন্ধ করে সভা-সমাবেশ করি নাই। হরতাল করি নাই। গাড়ি ভাঙচুর করি নাই। সংসদে বিরোধী দল হিসেবে সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম, অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাপার চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দলের ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে মুজিবুল হক এসব কথা বলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২৪ দফা ইশতেহার প্রকাশ করেছে জাপা।
এবারের নির্বাচনে জাপার অংশগ্রহণ নিয়ে নানা নাটকীয়তা হয়। ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন বিকেলে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক বলেন, ২৮৩টি আসনে ভোটে থাকছে জাতীয় পার্টি। এবারের নির্বাচনে ২৬টি আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার ভোটের সমঝোতা হয়। এসব আসনে লাঙ্গল প্রতীকের বিপরীতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নেই।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো জোট বা মহাজোটে নেই জানিয়ে মুজিবুল হক বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের চেয়ে বেশি আসনে আমরা প্রার্থী দিয়েছি। আমরা আসন ছাড় দিইনি। সব আসনে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছি। আওয়ামী লীগ কেন আসন ছেড়েছে, তারাই ভালো বলতে পারবে।’
আওয়ামী লীগের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনার প্রসঙ্গে মুজিবুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, এখনো হবে। নির্বাচন অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য করতে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ভোটাররা যাতে আসে, সে পরিবেশ–পরিস্থিতি তৈরির লক্ষ্যে আলোচনা হয়েছে।
বিরোধী দল হিসেবে জাপার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মুজিবুল হক বলেন, ‘সংসদে বিরোধী দল হিসেবে সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম, অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। সংসদে জনগণের পক্ষে এমন কোনো কথা নেই, যা জোর গলায় আমরা বলি নাই। সরকারের আনা বিল নিয়ে কথা বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘রাস্তাঘাট বন্ধ করে সভা-সমাবেশ করি নাই। হরতাল করি নাই। গাড়ি ভাঙচুর করি নাই। সহনশীল বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রেখেছি। আমরা হরতালের পক্ষে না।’
জাপার ২৪ দফা ইশতেহারের স্লোগান ‘শান্তির জন্য পরিবর্তন, পরিবর্তনের জন্য জাতীয় পার্টি’।
ইশতেহারের ১ নম্বর দফাতেই রয়েছে দেশের এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করার অঙ্গীকার। ইশতেহারে বলা হয়, দেশে বিদ্যমান ৮টি বিভাগকে ৮টি প্রদেশে উন্নীত করা হবে। ৮টি প্রদেশের নাম হবে উত্তরবঙ্গ, বরেন্দ্র, জাহাঙ্গীরনগর, জালালাবাদ, জাহানাবাদ, চন্দ্রদ্বীপ, ময়নামতী ও চট্টলা প্রদেশ।
দুই স্তরবিশিষ্ট সরকার কাঠামো থাকবে। ফেডারেল সরকার ও প্রাদেশিক সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হবে ফেডারেল সরকার। ঢাকা শহর থেকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ সদর দপ্তর প্রাদেশিক রাজধানীতে স্থানান্তর করা হবে।
জাপার ইশতেহারে বলা হয়, নির্বাচনপদ্ধতির সংস্কার করা হবে। আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে সংসদ গঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দেওয়া হবে। বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখা হবে। দুর্নীতি কমিশন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হবে।
ইশতেহারে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বেকারদের মাসিক ভিত্তিতে ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাপা। খাদ্যে ভেজাল দেওয়া হলে আইন সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হবে। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি স্থিতিশীল করা হবে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক ভারসাম্য রক্ষা করা হবে। নেপাল, ভারত ও ভুটানের সঙ্গে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ চুক্তি করা হবে।
এ ছাড়া যেসব বিষয়ে জাপার ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ উপজেলাব্যবস্থা প্রবর্তন, সুশাসনের বাংলাদেশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মামলাজটের অবসান, শিক্ষিত/অশিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ, শিক্ষাপদ্ধতির সংশোধন, সন্ত্রাস দমন ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, ইসলামের আদর্শ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, সর্বোচ্চ ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের কল্যাণ সাধন, খাদ্যনিরাপত্তা, নদী সংরক্ষণ ও ভাঙন রোধে ব্যবস্থা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে স্থিতিশীলতা, শিল্প ও অর্থনীতির অগ্রগতি সাধন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ, পররাষ্ট্রনীতিতে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, নারী সমাজের কল্যাণ সাধন, জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান-মুদ্রানীতি-রাজস্ব নীতির সংস্কার, গুচ্ছগ্রাম পথকলি ট্রাস্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠা, রেশনিং চালু, যোগাযোগব্যবস্থার সংস্কার ও অভিবাসন।