রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ-বিরাজমান সংকট: উত্তরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভা
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ-বিরাজমান সংকট: উত্তরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভা

সরকারের কোথায় ভুল হয়েছে, আত্মবিশ্লেষণ প্রয়োজন: কাজী খলীকুজ্জমান

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সংকটের ক্ষেত্রে সরকারের কোথায় ভুল হয়েছে, তা আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেন, যৌক্তিক দাবির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। তবে পরিকল্পিতভাবে সেটা ছিনতাই হয়ে যায়। এতগুলো প্রাণ চলে গেল, প্রত্যেক মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বাংলাদেশ-বিরাজমান সংকট: উত্তরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় খলীকুজ্জমান এ কথাগুলো বলেন। সভার আয়োজক সম্মিলিত নাগরিক সমাজ।

সম্মিলিত নাগরিক সমাজের সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, সরকারকে আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে, কেন এমন অবস্থার সৃষ্টি হলো। সরকারের কোথায় ভুল হয়েছে, আগে পদক্ষেপ নেওয়া যেত কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। নাগরিক সমাজের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক কারা ছিন্ন করল, সেটাও বিশ্লেষণ করতে হবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে নানামুখী সংকট দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন কাজী খলীকুজ্জমান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট আছে। ব্যবস্থাপনাগত সংকট রয়েছে। যেভাবে প্রশাসন ও পুলিশের কাজ করার কথা, সেভাবে কাজ হচ্ছে না। হেফাজতে নিয়ে (আন্দোলনের সমন্বয়কদের) বক্তব্য দিলে তা বাইরে বিশ্বাসযোগ্য হবে না, তা–ও দেওয়া হয়েছে, যা খুবই ‘অ্যামেচার’ (আনাড়ি)।

সরকারের কিছু ‘সুবিধাভোগীর’ সমালোচনা করেন খলীকুজ্জমান। তিনি বলেন, ‘স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষ আছে, যাদের সংকটের সময় পাওয়া যায় না। কিন্তু সুসময়ে তারা সামনে থাকে, যা আমরা এখন দেখছি। সকাল, দুপুর ও বিকেল যারা প্রশংসা করে বেড়ায়, তারা প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না। যারা মতের অমিল হলেও বলতে পারে, তারাই প্রকৃত বন্ধু।’

দেশ এখন অস্তিত্বের সংকটের মুখে বলে মনে করেন খলীকুজ্জমান। দেশকে এগিয়ে নিতে সার্বিক আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার বলে মত দেন তিনি। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া হতে হবে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক। এই প্রক্রিয়া প্রশাসন ও বলপ্রয়োগের ভিত্তিতে হলে হবে না। কারণ, বলপ্রয়োগ জাতিকে এক করতে পারে না।

আলোচনা সভায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, জুলাইয়ের শুরু থেকে দেশের যে অবস্থা দেখছেন, তাতে ভালো থাকার কথা নয়। এখন বাংলাদেশে একপ্রকার দুরবস্থা চলছে। যার ফলে দেশের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর কারণ দেশ চালানোর নীতির সমস্যা। আওয়ামী লীগের সুবিধাপ্রাপ্তদের গত ১৫ দিন ধরে দেখা যাচ্ছে না। যাঁরা সুবিধার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে ঘোরেন, তাঁদেরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের আলোচনা বা টক শোর জন্য ডাকলে এখন তাঁরা আসেন না। ফোন করলে বলেন ‘ব্যস্ত’ আছেন। হঠাৎ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করবে। তাহলে কি জামায়াতের অর্থনীতি নিষিদ্ধ হবে? জামায়াতের ৮১টি প্রতিষ্ঠান, যেগুলো দিনের পর দিন ব্যবসা করে আসছে, সেগুলো কি বন্ধ হবে?

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, স্বৈরশাসক গেলেও তাদের প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে। যখনই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকে, তখন তাদের বিপদে ফেলার চেষ্টা হয়। সরকারকে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। সঠিক সময়ে ঠিক কাজ করতে পারছে না সরকার। সরকারের কোনো নীতি নিয়ে নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয় না। সমাজের সর্বস্তরে একধরনের লোভী ভাব দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। যারা চোর-লুটেরা, তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক ম হামিদ বলেন, ‘অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটের চেয়েও দেশের অস্তিত্বের সংকটের কথা উঠেছে। এ বিষয়ে বেশি করে ভাবতে হবে। ভবিষ্যতে এটা নিয়ে কাজও করতে হবে। নিজেদের আত্মতুষ্টি নিয়ে অনেক দিন কাটিয়েছি। রাজনৈতিক সক্ষমতা-দক্ষতা নিয়ে আমরা যতটা ভেবেছি, যে অনেক কিছু অর্জন করেছি, সেটা যে কতটা মেকি ছিল, ঠুনকো ছিল, সেটা ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়ে গেল।’

বিটিভিতে কয়েক দফায় হামলা ও লুট হয়েছে উল্লেখ করে ম হামিদ বলেন, অর্থাৎ একটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়ে পেশাদারির অভাব রয়েছে। একটি স্থাপনার চারপাশে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার, সেখানেও পেশাদারির অভাব রয়েছে। এই জায়গাগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।

ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে এমন কিছু ঘটতে পারে, সেটা সরকার কেন বুঝতে পারল না, তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এখন ছাত্রদের আন্দোলনে থাকার যৌক্তিকতা আর নেই। তারপরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কেউ কেউ আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা করছে।

সভা সঞ্চালনা করেন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সভাপতি এম এ হামিদ।