সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে এতটা গুরুত্ব দিতে চাইছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। এ অবস্থায় সাবেক একজন সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সরকারের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন নেতা ও মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। তাঁরা মনে করছেন, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সরকার বা আওয়ামী লীগের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এটা নিয়ে দল বা সরকারে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনাও হয়নি। আজিজ আহমেদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বড় করে দেখছে না সরকার বা আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগে এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এলে হয়তো সামরিক-বেসামরিক আমলাদের মধ্যে এর প্রভাব পড়ত।
দায়িত্বশীল নেতারা এ-ও বলছেন, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই আজিজ আহমেদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হওয়ার বিষয় গণমাধ্যমে খবর হয়েছে। এবার পরিবারের সদস্যদের যুক্ত করে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে এটিকে আচমকা কোনো মার্কিন তৎপরতা বা চেষ্টা হিসেবে দেখার প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া ভোটের আগে যে মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়, আজিজ আহমেদকে সেই নীতিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেটা বলেছে যে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশনকে জেনারেল আজিজের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। জেনারেল আজিজের বিষয়ে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটা ভিসা নীতির প্রয়োগ নয়, এটি অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন আইনের প্রয়োগ। সেখানে অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন একটা আইন আছে, সেটা প্রয়োগ করা হয়েছে। এটা নিয়ে আমি আর কিছু বলব না।’
তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কারও কারও মত হচ্ছে, এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে ধারণা করা কঠিন। তাদের সঙ্গে সরকারের সব ধরনের তিক্ততা শেষ হয়ে গেছে-এটা ভাবা ঠিক হবে না। ভিসা নীতির আওতায় না হলেও মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর তিন দিনের বাংলাদেশ সফরের এক সপ্তাহের মধ্যেই আজিজ আহমেদের ঘোষণা দেওয়ার পেছনে কিছু একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তাই সতর্ক হওয়ার দরকার।
জাতীয় নির্বাচনের আগে যখন ভিসানীতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তখন মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছিল। সেই প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছিল। এরপরই ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। এবার যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সফরে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এল। ফলে যুক্তরাষ্ট্র বাইরে যা-ই বলুক না কেন, তারা তাদের পরিকল্পনা ও অবস্থান থেকে সরে আসেনি। এ ধরনের সন্দেহও তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকের মধ্যে।
দলটির নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আওয়ামী লীগের নেতাদের ‘পাত্তা’ না দেওয়ার বিষয়টির জবাবও হতে পারে আজিজ আহমেদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা।