সিলেট সিটি নির্বাচন

২২ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের জয়, বিএনপির বহিষ্কৃতরাও জিতেছেন

বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আটজন এবারও জয় পেয়েছেন। এ ছাড়া জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত চারজন বিজয়ী হয়েছেন। 

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্রে এসেছেন ওয়াহিদা বেগম। ওয়াহিদা বলেন, এই প্রথম তিনি মেশিনে (ইভিএমে) ভোট দিলেন। নগরের সুবিধবাজার এলাকার আনন্দ নিকেতন স্কুলে গতকাল সকাল ৯টায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টিতে আওয়ামী লীগের নেতারা কাউন্সিল নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা-কর্মী ও জামায়াতপন্থীরাও জয় পেয়েছেন। গতকাল বুধবার রাতে কেন্দ্র থেকে পাওয়া ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।

সিলেট সিটিতে গতবার ২৭টি ওয়ার্ড ছিল। এবার আরও ১৫টি নতুনভাবে যুক্ত হয়ে ওয়ার্ড বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২। 

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কাউন্সিলর পদে নির্বাচিতদের মধ্যে গত নির্বাচনে বিজয়ী ২০ জন আছেন। ৪২টি ওয়ার্ডের নির্বাচিতদের মধ্যে আওয়ামী লীগপন্থী আছেন ২২ জন। 

এর বাইরে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আটজন এবারও জয় পেয়েছেন। এ ছাড়া জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত চারজন বিজয়ী হয়েছেন। বাকিদের মধ্যে দুজন দলনিরপেক্ষ এবং ছয়জনের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।

১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃতীয়বারের মতো জয় পেয়েছেন সৈয়দ তৌফিকুল হাদী। মহানগর বিএনপির সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় বহিষ্কৃত হন। ২ নম্বর ওয়ার্ডে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন বিক্রম কর সম্রাট। তিনি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন সাবেক যুবলীগের কর্মী শেখ তোফায়েল আহমেদ। এ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী নির্বাচনে অংশ নেননি। 

৫ নম্বর ওয়ার্ডে টানা চতুর্থবারের মতো জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ। তিনি দলনিরপেক্ষ। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে টানা পাঁচবারের মতো জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। মহানগর বিএনপির সাবেক এই যুগ্ম আহ্বায়ক দলীয় সিদ্ধান্তে সদ্য বহিষ্কৃত হয়েছেন। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পান সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ। তিনি জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জগদীশ চন্দ্র দাশ। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে টানা পঞ্চমবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. মখলিছুর রহমান। 

মা শিখা গুপ্তর সঙ্গে ভোট দিতে এসেছেন নতুন ভোটার শিপা গুপ্ত। নগরের পাঠানটুলা শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে সকাল পৌনে নয়টায়

১০ নম্বর ওয়ার্ডে টানা দ্বিতীয়বারের মতো জয় পেয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা তারেক উদ্দিন। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর আবদুর রকিব। তিনি কৃষক লীগের সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মো. সিকন্দর আলী। তিনি আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে টানা ষষ্ঠবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য শান্তনু দত্ত। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মো. নজরুল ইসলাম। ওয়ার্ড বিএনপির এই সদস্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত হন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মো. ছয়ফুল আমিন। তিনি আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত। 

১৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল মুহিত। তিনি জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর রাশেদ আহমদ। তিনি আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন এ বি এম জিল্লুর রহমান। ওয়ার্ড বিএনপির এই সদস্য নির্বাচনে অংশ নিয়ে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর এস এম শওকত আমীন। তিনি আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত।

২০ নম্বর ওয়ার্ডে টানা পঞ্চমবারের মতো জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আজাদুর রহমান। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মো. আবদুর রকিব। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তিনি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ। তিনি আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত। 

২৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন হুমায়ুন কবির। ওয়ার্ড বিএনপির এই সদস্য দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় সদ্য বহিষ্কৃত হয়েছেন। ২৫ নম্বরে জয় পেয়েছেন তাকবির ইসলাম। তিনি আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ তৌফিক বকস। 

২৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন আবদুল জলিল। তিনি জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত। নবগঠিত ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন রায়হান হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী হন মাজহারুল ইসলাম। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হয়েছেন মো. রকিব খান। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী কাউন্সিলর নজমুল হোসেনের। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন সিলেট সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা রুহেল আহমদন। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পান দেলোয়ার হোসেন নাদিম। জেলা ছাত্রদলের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে অংশ নিয়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন জয়নাল আবেদীন। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। 

ভোট দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষায় ভোটকেন্দ্রের সামনে বসে আছেন প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকেরা। নগরের চৌকিদেখী এলাকায়

৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরন মাহমুদ। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন রিয়াজ মিয়া। তিনি জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত। ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছেন হেলাল হাজি। তিনি আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত। 

৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন আলতাফ হোসেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় সিলেট জেলা ছাত্রদলের এই সভাপতি বহিষ্কৃত হয়েছেন। ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে লিটন আহমদ জয় পেয়েছেন। তিনি দলনিরপেক্ষ হিসেবে পরিচিত। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন ফখরুল আলম। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পাওয়া মতিউর রহমানের রাজনৈতিক পরিচয়ও পাওয়া যায়নি।