নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে গণ অধিকার পরিষদের প্রথম কাউন্সিল আজ সোমবার বেলা একটায় শুরু হয়েছে। দলের সদস্যসচিব নুরুল হকের সমর্থকদের ঘোষিত এই কাউন্সিলে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার অনুসারীরা। তবে রেজা কিবরিয়ার ঘোষিত সদস্যসচিব হাসান আল মামুন শেষ সময়ে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন।
শেষ সময়ে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলকে সম্ভাব্য ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে প্রার্থী হয়েছি। দুই পক্ষের মধ্যে শেষ সময় পর্যন্ত সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছে। আজ তো শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন। তাই দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কেউ কাউন্সিলে অংশ না নিলেও পরে কমিটিতে আসার সুযোগ থাকবে।’
নুরুল হকের সমর্থকদের কাউন্সিলের বিপরীতে আজ বেলা ১১টায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন রেজা কিবরিয়ার অনুসারীরা। সেই কর্মসূচিও স্থগিত করেছেন তাঁরা। ফলে শেষ মুহূর্তে রেজা কিবরিয়ার অনুসারীদের একটা অংশের সঙ্গে দলের দূরত্ব কমার ও সমঝোতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট মিছিল নিয়ে দলের জেলা কমিটি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আসছেন। দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন হচ্ছে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উচ্চতর পরিষদের আট সদস্যপদেও ভোট হচ্ছে।
দলের গণমাধ্যম সমন্বয়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা একটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। হাসান আল মামুনের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। বাকি যাঁরা কাউন্সিলের বিরোধিতা করেছেন, তাঁরাও দলে ফিরবেন বলে আমরা আশাবাদী।’
গণ অধিকার পরিষদ সূত্রে জানা যায়, জাতীয় কাউন্সিলের ভোটার ২১৬ জন। গণ অধিকার পরিষদে সভাপতি পদপ্রার্থী তিনজন। তাঁরা হলেন সদস্যসচিব নুরুল হক নুর, যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল উস সাকিব ও সহকারী আহ্বায়ক বায়েজিদ শাহেদ।
আর সাধারণ সম্পাদক পদে পাঁচ প্রার্থী হলেন যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, বিপ্লব কুমার পোদ্দার, মাহফুজুর রহমান খান, হাসান আল মামুন ও যুগ্ম সদস্যসচিব জিল্লু খান। উচ্চতর পরিষদের ৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ১৮ জন।
কাউন্সিলের জন্য করা ভোটার তালিকা যাচাই করে দেখা যায়, রেজা কিবরিয়ার পক্ষ নিয়ে যাঁরা সংবাদ সম্মেলনসহ গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁরাও ভোটার হিসেবে রয়েছেন। ভোটার তালিকার ১ নম্বরে আছেন নুরুল হক ঘোষিত দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান। আর ২ নম্বরে রয়েছে রেজা কিবরিয়ার পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করা যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানের নাম।
সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন করে জনপ্রিয়তা পাওয়া নুরুল হক ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে নুরুল হক ও তাঁর সমমনা ব্যক্তিরা ২০২১ সালের অক্টোবরে গণ অধিকার পরিষদ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দল চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে।
গণ অধিকার পরিষদের শীর্ষ দুই নেতা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হকের বিরোধ থেকে বেশ কয়েক দিন ধরে দলে অস্থিরতা চলছে। দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অব্যাহতি, অনাস্থা প্রস্তাব, অপসারণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ১ জুলাই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নুরুল হকের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা আহ্বায়কের পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন। ওই বৈঠকে ১০ জুলাই জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণাও দেওয়া হয়।
এ ঘটনার ছয় দিন পর গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য ঘোষণা দেন, রেজা কিবরিয়াই দলের আহ্বায়ক আছেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে দলের কাউন্সিলের দিন নির্ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে দলকে ভাঙনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
গণ অধিকার পরিষদের দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেজা কিবরিয়ার অনুসারীরা কাউন্সিল পেছানোর দাবি করেছিলেন। কিন্তু নুরুল হকের অনুসারীরা তা মানতে রাজি হননি।