নেতাদের বাসায় বাসায় অভিযান, ফখরুল গ্রেপ্তার

সারা দেশে অভিযান চলছে। ঢাকায় বিএনপির ৫৪৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার। ৩১ জেলায় গ্রেপ্তার আরও ১,১১২ জন।

হরতালের সমর্থনে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির মিছিলটি চকবাজার হয়ে কান্দিরপাড়ের দিকে এলে লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ। ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মিছিলটি। গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে কুমিল্লার চকবাজার এলাকায়

আগের দিন মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জেরে গতকাল রোববার বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের দিন ঢাকায় ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় দলটির নেতাদের বাসায় বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দেড় হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে। এর মধ্যে ঢাকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৫৪৮ জনকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মির্জা ফখরুলকে তাঁর গুলশানের বাসা থেকে গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ১০ ঘণ্টা ডিবি কার্যালয়ে রাখার পর রাতে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়।

মির্জা আব্বাসের বাসা সাদা পাোশাকে ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ

গত শনিবার পুলিশের সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের কারণে দলটির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। বিএনপি সূত্র জানায়, শনিবার রাত থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশ দলটির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। মধ্যরাত থেকে ঢাকায় বিভিন্ন নেতার বাসায় অভিযান চালানো হয়। গতকাল সকাল থেকে শুরু হয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বাসায় বাসায় অভিযান।

এর মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার করতে গতকাল সকালে ও দুপুরে দুই দফা তাঁর শাজাহানপুরের বাড়িতে যান ডিবির সদস্যরা। তবে মির্জা আব্বাসকে বাসায় না পেয়ে ডিবির পুলিশ ফিরে যায়। এর আগে গতকাল সকাল নয়টার দিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বনানীর বাসায় তল্লাশি চালায় ডিবি। তবে সে সময় তিনি বাসায় ছিলেন না।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বাড়িতে সাদা পোশাকে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইসরাফিল খসরু সাংবাদিকদের বলেন, সকালে ডিবি সদস্যরা এসে তাঁর বাবাকে খোঁজেন। তাঁরা বাসার প্রতিটি কক্ষ তল্লাশি করেন। এ সময় ডিবি সদস্যরা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পাসপোর্ট এবং তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোন নিয়ে যান; তবে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট পর সেগুলো ফেরত দিয়েছেন।

যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনের লালমাটিয়ার বাসায়ও সাদাপোশাকের পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। তিনিও সে সময় বাসায় ছিলেন না বলে জানা গেছে।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের গুলশানের বাসায় ডিবি অভিযান ও তল্লাশি চালায় গতকাল দুপুরে। তাঁকে না পেয়ে তাঁর ছোট ভাই ইশফাক হোসেন ও গাড়িচালক রাজীবকে আটক করে নিয়ে যায় ডিবি। ইশফাককে পরে পল্টন থানায় করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালের বাসায় গত শনিবার রাতে অভিযান চালায় পুলিশ। তখন তাবিথ বাসায় ছিলেন না। অবশ্য ওই রাতে তাবিথের ছোট ভাই তাজওয়ার এম আউয়ালকে আটক করেছিল, অবশ্য পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সর্বশেষ গতকাল মধ্যরাতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের পল্লবীর বাসায় পুলিশ অভিযান চালায় বলে জানা গেছে।

মির্জা ফখরুল কারাগারে

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। ঢাকা, ২৯ অক্টোবর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের গুলশানের বাসায় গতকাল সকাল নয়টার দিকে যায় ডিবির একটি দল। তাঁর স্ত্রী রাহাত আরা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ডিবি পুলিশের সদস্যরা বাসায় এসে প্রথমে সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যান। তাঁরা ১০ মিনিট পর আবার এসে ফখরুলকে নিয়ে যান।

রাহাত আরা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী প্রচণ্ড অসুস্থ, তাঁর চিকিৎসা চলছিল। ৭৫ বছর বয়স্ক মানুষ, তাঁকে এভাবে নিয়ে যাওয়া তিনি মেনে নিতে পারছেন না।
বাসা থেকে নেওয়ার পর মির্জা ফখরুল ইসলামকে দিনভর ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়। পরে তাঁকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের হামলার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং রাত ৮টা ১০ মিনিটে আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান।

এর আগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বহুল আলোচিত সমাবেশের আগে ৭ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তখন তাঁকে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছিল পুলিশ। এক মাস কারাভোগের পর চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্তি পান। গতকাল নতুন করে মামলা দেওয়ার পর মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে।

৩১ জেলায় হাজারের বেশি গ্রেপ্তার

প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী, ঢাকার বাইরে ৩১ জেলায় গতকাল বিএনপির আরও ১ হাজার ১১২ নেতা-কর্মীকে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতাদের রয়েছেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলে রাব্বী, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন, গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবী প্রমুখ। ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ থেকে ফেরার পথে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার ৪৭ জন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া নওগাঁয় ১১৪ জন, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ৪, বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও দুপচাঁচিয়ায় ২৭, রাজবাড়ীতে ১১, মুন্সিগঞ্জে ২, সাতক্ষীরায় ৪৩, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ১৩, দিনাজপুরে ৩৮, পিরোজপুরে ৪১, নোয়াখালীতে ৮৪, রাজশাহীতে ১২৭, বগুড়ার শেরপুরে ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭০, নারায়ণগঞ্জে ৭, সাতক্ষীরায় ১৭, চুয়াডাঙ্গায় ৩৮, চাঁদপুরে ১৩, ঝিনাইদহে ২৬, জয়পুরহাটে ৪৬, সুনামগঞ্জে ৬, জামালপুরে ৬৮, সিরাজগঞ্জে ১৪৭, ঝালকাঠিতে ১৫, নীলফামারীতে ৬, সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ১১, মানিকগঞ্জে ৭ ও সাভারে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার ও আটকের খবর পাওয়া গেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। এর মধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় ও মধ্যম সারির নেতারা প্রধান লক্ষ্যবস্তু বলে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে দলটির নেতাদের অনেকে নিজের বাড়িতে থাকছেন না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র, উপকমিশনার (গণমাধ্যম) ফারুক হোসেন গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, শনিবারের সংঘর্ষ ও পুলিশ হত্যার ঘটনায় করা মামলায় যাঁদের আসামি করা হয়েছে এবং তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাঁদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে। এ জন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যাঁরা মামলার আসামি, তাঁদের খোঁজ করা হচ্ছে। তাঁদের যদি কেউ প্রকাশ্যে আসেন, সে ক্ষেত্রে জামিনে আছেন কি না সেটা খতিয়ে দেখে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।