ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের

মন্ত্রী–এমপিদের স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার ঘটনায় শাস্তি হবেই: ওবায়দুল কাদের

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার ঘটনায় শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে, তাদের কোনো না কোনোভাবে শাস্তির মুখোমুখি হতেই হবে।’

ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে আরও বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৩ জন সংসদ সদস্য দলের মনোনয়ন পাননি। এটা কি একরকম শাস্তি নয়? মন্ত্রিপরিষদে ২৫ জন নেই। সময়মতো শাস্তি হবে। এটা একটা উদাহরণ।

আজ সোমবার বিকেলে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। এর আগে বৈঠকে ১৭ মে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটি আলোচনা করা হয়। ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালনের বিষয়েও আলোচনা হয় বলে বৈঠক সূত্র জানায়।

উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, তাঁদের নিবৃত্ত করার জন্য দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের আরও উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এবার চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে তিন ধাপের নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা শেষ হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনের তিন ধাপেই মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সন্তান, নিকটাত্মীয় ও স্বজনদের ৫২ জন প্রার্থী রয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, সংসদ সদস্যদের অনেকে ক্ষমতা নিজের হাতে ধরে রাখতে সন্তান বা নিকটাত্মীয়দের ভোটের মাঠে নামিয়েছেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির কোনো দিনই আগ্রহ ছিল না। মাগুরা মার্কা ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার, হ্যাঁ-না ভোটে ১১৪ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি—এসবই বিএনপির সৃষ্টি।

গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করার কাজটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে আইনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন থেকে মুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন কমিশনের আইনে ৮২টি সংশোধনী এনেছেন। আর বিএনপি কী করেছে?

পৃথিবীর কোনো দেশেই গণতন্ত্র শতভাগ ত্রুটিমুক্ত নয় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত বলে তাঁরাও দাবি করেন না। তবে গণতন্ত্রকে ত্রুটিমুক্ত করার চেষ্টা রয়েছে।

  কর্মসূচি  

১৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো দলীয় প্রধানের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। সারা দেশে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করা হবে। দুপুরে দেশের মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচি পালিত হবে।

১৭ মে ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড দিয়ে নগরের সড়কদ্বীপ সজ্জিত করা হবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তবে কোনো আলোকসজ্জা কর্মসূচি নেওয়া হবে না।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ১৬ মে দুপুরে অসচ্ছল গরিব সাধারণ মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ওই দিন তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিপুল উৎসাহ–উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী হীরকজয়ন্তী উদ্‌যাপন করা হবে। সারা দেশে থানা-উপজেলা ছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়েও কর্মসূচি থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভা হবে ২৩ জুন বিকেলে। এতে দলের নেতা-কর্মী ছাড়াও বুদ্ধিজীবী, সমমনস্ক ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় আলোকসজ্জা বাদ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ–সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে।

ওবায়দুল কাদের জানান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সবুজ ধরিত্রী’ কর্মসূচি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আনন্দ শোভাযাত্রা পালন করবে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো। ১১ মে দলের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন কর্মসূচির বিস্তারিত জানানো হবে।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এর আগে আমাদের সব অনুষ্ঠানেই বিএনপিকে দাওয়াত দিয়েছি, এবারও বিএনপিকে দাওয়াত দেওয়া হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও পাবে।’