দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন

‘কিংস’ পার্টিগুলো সন্তুষ্ট হতে পারছে না

কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ্‌ মো. আবু জাফর বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, এমন আশ্বাসে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এরপরও যদি দেখেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে না বা নির্বাচনের পরিবেশ নেই, তাহলে বিএনএম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে।

আবু জাফর তাঁর নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরের মধুখালীতে গতকাল শনিবার বিএনএমের বর্ধিত সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি গত ২০ নভেম্বর বিএনপি ছেড়ে বিএনএম নামের দলটিতে যোগ দিয়ে ফরিদপুর-১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন।

ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে কিছু আশ্বাস পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলছেন বিএনএম নেতা শাহ্‌ মো. আবু জাফর। তবে গতকাল নিজের নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরের মধুখালীতে সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া বক্তব্যে আবু জাফর নির্বাচন থেকে সরে আসার একধরনের হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আশ্বাস অনুযায়ী যদি দেখা যায় যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে না বা নির্বাচনের পরিবেশ নেই, তাহলে বিএনএম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে।

বিএনএমসহ ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত অন্য দলগুলো যেমন সুপ্রিম পার্টি, তৃণমূল বিএনপি এবং বিএনপির জোট ছেড়ে আসা কল্যাণ পার্টির কিছু নেতাকে জয়ী করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ভোট করার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতাও থাকবে। তবে এসব নেতার আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর চিন্তা নেই। সরকারের এ ধরনের অবস্থান নিয়ে কিংস পার্টিগুলোও সন্তুষ্ট হতে পারছে না। এটি এখন এসব দলের কোনো কোনো নেতার বক্তব্যে প্রকাশ পাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তাঁদের দল জোটের শরিক এবং জাতীয় পার্টির সঙ্গে কিছু আসন ভাগাভাগি বা সমঝোতা আনুষ্ঠানিকভাবেই করছে। কিন্তু কিংস পার্টিগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি পুরোপুরি অনানুষ্ঠানিক রাখবে আওয়ামী লীগ। এসব দলের নেতাদের কাউকে কাউকে জয়ী করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

কিংস পার্টিগুলো এবং আওয়ামী লীগের সূত্রে জানা গেছে, জাপা ও ১৪ দলের বাইরে বিএনপির জোট থেকে বেরিয়ে আসা কল্যাণ পার্টির জেনারেল মুহাম্মদ ইবরাহিমকে কক্সবাজার থেকে জিতিয়ে আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমদের প্রার্থিতা আপিলেও বাতিল রয়েছে। ফলে এই আসনে কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের জন্য অনেকটা সহজ হলো। এই আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, ইবরাহিমকে জয়ী করার ব্যাপারে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কাজ করবে।

এর বাইরে ফরিদপুরে বিএনএমের শাহ আবু জাফরকে জেতার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। আবু জাফরের কিছু কর্মীর মামলা প্রত্যাহার করা, জেল থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করা এবং তাঁর কর্মীদের পুলিশ বিরক্ত করবে না, এমন আশ্বাস তিনি পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

শাহ আবু জাফরও গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন চাইছেন। নেতা-কর্মীদের বিরক্ত করা হবে না, এ নিশ্চয়তা চেয়েছেন। তাঁর চাওয়া পূরণ হচ্ছে বলেও তিনি জানান। তবে ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান। দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীও আছেন।

তৃণমূল বিএনপির সমশের মবিন চৌধুরীকে সিলেটে এবং তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জে ভোট করছেন। তাঁদের জেতানোর চূড়ান্ত আশ্বাস দেওয়া হয়নি। তবে তাঁদের জন্যও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।

বিএনএম এবং তৃণমূল বিএনপির মাধ্যমে বিএনপি ভেঙে অনেক নেতাকে নির্বাচনে আনার একটা চেষ্টা ছিল। সে জন্য এই দলগুলো বেশ গুরুত্ব পেয়েছিল সরকারের কাছে। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল না হওয়ায় কিংস পার্টিগুলোর গুরুত্ব কিছুটা কমেছে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে।

সূত্রগুলো আরও জানাচ্ছে, এ জন্য জাপার সঙ্গে আসন সমঝোতায় যেতে হয়েছে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রেখেছে আওয়ামী লীগ। ফলে এ দুটি দলকে আসন ছাড়ের বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী নয় আওয়ামী লীগ। তবে এই দলগুলো ভোটে এসেছে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করা ব্যক্তির আশ্বাসে। ফলে কোনো কোনো পরিচিত নেতাকে জিতিয়ে আনার একটা চেষ্টা থাকবে। তবে আনুষ্ঠানিক সমঝোতা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরিয়ে দেওয়া হবে না।

এসব দলের বাইরে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারার সঙ্গে এবার কোনো সমঝোতার কথা শোনা যায় না। দলটির মহাসচিব এম এ মান্নানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বি চৌধুরীর ছেলে মাহী বি চৌধুরী মুন্সিগঞ্জ-১ আসন থেকে ভোট করছেন।

এদিকে ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে কারও সঙ্গেই আসন সমঝোতার সম্ভাবনা নেই। এসব দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পক্ষে যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁরা এই দলগুলোকে আসন পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন না। শেষ পর্যন্ত তাঁদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবেচনার জন্য অপেক্ষায় থাকতে বলা হয়েছে।