এরশাদ না চাইলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল জাতীয় পার্টি (জাপা)। সেটি কীভাবে হয়েছিল, তা সংসদকে জানিয়েছেন দলটির বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে মুজিবুল হক বলেন, তাঁরা কয়েকজন ২০১৪ সালে দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে বেইমানি ও বিদ্রোহ করে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁরা সেই নির্বাচনে না এলে দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হতো।
এর আগে গত সোমবার এইচ এম এরশাদকে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনের একটি মন্তব্যের জেরে সংসদে ব্যাপক হট্টগোল হয়। তার রেশ ধরে আজ অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন মুজিবুল হক। পরে মোতাহার হোসেনের ‘অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য’ এক্সপাঞ্জ (কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া) রুলিং দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন জাতীয় পার্টি বর্জন করেছিল। আমাদের চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তিনি চূড়ান্ত সময় বললেন নির্বাচন করবেন না এবং সারা দেশের সব প্রার্থীকে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য চিঠি দেন। নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নেন। সেদিন এমন একটা অবস্থা হয়েছিল...বিএনপি নির্বাচনে আসে না, কোনো দল আসবে না। জাতীয় পার্টি যদি না আসে (নির্বাচন) তাহলে বাংলাদেশে একটা অসাংবিধানিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। সাংবিধানিক শূন্যতার সৃষ্টি হতো।’
মুজিবুল হক বলেন, ‘সেই দিন বেগম রওশন এরশাদ এবং আমরা কয়েকজন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে বেইমানি ও বিদ্রোহ করে বেগম এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচন করেছিলাম।’
২০১৪ সালের নির্বাচনে লালমনিটরহাট-১ আসনে এরশাদের প্রার্থিতা প্রসঙ্গে মুজিবুল হক বলেন, সে নির্বাচনে এইচ এম এরশাদ লালমনিরহাট, রংপুরসহ কয়েকটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। রংপুরেও তিনি নির্বাচন করতে চাননি।
মুজিবুল হক বলেন, ‘আমরা শুধু লিগ্যাসির জন্য, এই সংসদে এরশাদ সাহেবের মতো লোক আছে, এটা প্রমাণ রাখার জন্য সেদিন আমরা কষ্ট করে তাঁকে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করেছি। লালমনিরহাটে তিনি নির্বাচন করেন নাই।’
সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনের উদ্দেশে মুজিবুল হক বলেন, ‘২০১৪ সালে আমরা বেগম এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে না আসতাম, তাহলে তিনি এমপি বা প্রতিমন্ত্রীও হতে পারতেন না। আমাদের নির্বাচন করার কারণে তিনি প্রতিমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন।’
মোতাহার হোসেন বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে নির্বাচনে জামানত হারিয়েছিলেন এইচ এম এরশাদ। তাঁর বক্তব্য ‘দুঃসাহসিক’ আখ্যা দিয়ে তা এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান মুজিবুল হক। তিনি বলেন, এরশাদ সাহেব আর যা–ই করেন, কাবিখা বিক্রি করেননি, বালু বিক্রি করেননি। অনেকেই এগুলো করেন।
অবশ্য ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট–১ আসনে এরশাদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় তাঁর প্রার্থিতা বহাল ছিল। এরশাদ ভোট পেয়েছিলেন ৫ হাজার ৩৮১ ভোট। আর মোতাহার পান ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮১৪ ভোট।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ হঠাৎ সিএমএইচে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে তাঁর দল শেষ পর্যন্ত ভোটে ছিল। সিএমএইচে ভর্তি থাকা অবস্থাতেই এরশাদ রংপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পান।
মুজিবুল হক বক্তব্য দেওয়ার পর স্পিকার শিরীন শারমিন রুলিং দেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন রাষ্ট্রপতির ভাষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, এমন যে বিষয়গুলো উত্থাপন করেছিলেন, সেসব বক্তব্য এক্সপাঞ্জ (কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া) করা হলো। সেই সঙ্গে বিরোধী দলের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ তাঁর বক্তব্যে যে অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা–ও এক্সপাঞ্জ করা হলো।
অবশ্য সোমবার স্পিকার রুলিং দিয়ে বলেছিলেন, মোতাহার হোসেনের বক্তব্যে কোনো তথ্যগত ত্রুটি থেকে থাকলে সেটা বিবেচনা করে তা পরীক্ষা করে এক্সপাঞ্জ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।