ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) মঙ্গলবার ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ৪৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক। আজ বুধবার এক বিবৃতিতে তাঁরা এ বিষয়ে উদ্বেগ ও নিন্দা জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের যে ঘটনা ঘটেছে, তা উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয়। মতপার্থক্যের কারণে কোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে কিংবা কারও বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করা, কাউকে শারীরিকভাবে আঘাত করা অসহিষ্ণু ও অগণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর অবস্থান সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কে ক্যাম্পাসে থাকবে, কে থাকবে না—নতুন বাংলাদেশে এটা কোনো ব্যক্তি, সংগঠন বা গোষ্ঠী ঠিক করে দিতে পারে না। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে আমরা এসব ঘটনা ঘটতে দেখেছি। সে সময় ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসের সব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিত। গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
শিক্ষার্থীদের জড়ো করে কোনো ব্যক্তি, সংগঠন বা গোষ্ঠীর ওপর হামলার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা। তাঁরা বলেন, ‘মব জাস্টিস’ ও ‘ক্যান্সেল কালচার’ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য নয়।
মতপ্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শত শত ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগ শাসনামলে ভিন্নমতকে কীভাবে দমন করা হতো, তা আমরা দেখেছি। তখন কেবল আওয়ামী লীগের রাজনীতিই প্রতিষ্ঠা করা হতো। এর বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ লড়াই করে বিজয় অর্জন করেছে। এই নতুন বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বা ভিন্নমতকে দমন করা—এই আন্দোলনের চেতনারই বিরুদ্ধে যায়।’
বিভিন্ন ধরনের স্বার্থবাদী গোষ্ঠী ও পরাজিত ফ্যাসিবাদের প্রতিনিধিরা সাধারণ শিক্ষার্থীর বেশ ধরে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের আহ্বান, এসব গোষ্ঠীর ব্যাপারে সতর্ক থেকে নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এলাকায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রাখুন। তা ছাড়া হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী ও সাঈদ ফেরদৌস, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ডা. মো. হারুন-অর- রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, প্রাচ্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দীপ্তি দত্ত, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নাঈম মোহায়মেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা শুভ্রা প্রমুখ।