দেশে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। তারা বলছে, ব্যাংক সংকট, খেলাপি ঋণ, অর্থ পাচার বেড়েই চলেছে। ভর্তুকি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলেও খেলাপি ঋণ আদায়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের ভূমিকা নেই; বরং আইন পরিবর্তন করে এসব ঋণখেলাপিকে আরও সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। রাজধানীর মুক্তি ভবনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গত শুক্রবার দুপুর ১২টায় দুই দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কমিটির সভা শুরু হয়। গতকাল শনিবার রাতে তা শেষ হয়। আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয় বিষয়ে বক্তব্য উত্থাপন করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন। সিপিবির সভায় বলা হয়েছে, রপ্তানি আয়ের ভুয়া তথ্য নিয়ে কথা উঠেছে। সরকার–সমর্থকেরাও এসব তথ্য অস্বীকার করতে পারছেন না। মুক্তবাজার অর্থনীতির চলমান ধারা অব্যাহত রেখে ব্যাংক একত্রীকরণ, সুদের হার, ডলারের দাম নির্ধারণ—এসব সংকট থেকে মুক্তি দিচ্ছে না। মুদ্রাস্ফীতি অব্যাহত আছে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পানির মূল্যবৃদ্ধি চলছে সমানতালে। সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই।
সাধারণ মানুষের জীবনের সংকট বাড়ছে উল্লেখ করে সিপিবির সভায় বলা হয়েছে, মূল্যবৃদ্ধিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। শ্রমজীবী মানুষ অনেক জায়গায় বেতন বঞ্চিত হচ্ছেন। নীরবে কর্মহানি ঘটছে অনেক জায়গায়। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলাবদ্ধতা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সরকারি তথ্যই বলছে, দেশের ২৬ শতাংশ পরিবার ধার করে মৌলিক চাহিদা পূরণ করছে।
সিপিবির এ সভায় কোটা সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়। সভায় বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা চলবে না। আবার মুক্তিযোদ্ধা কোটার নামে তাঁর সন্তানের বাইরে অন্য প্রজন্মের জন্য কোটা রাখার প্রয়োজন নেই।
রাজধানীর মিরনজিল্লা হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষদের উচ্ছেদ ও হামলার নিন্দা জানিয়েছে সিপিবি। তাঁদের স্থায়ী আবাসনের নিশ্চয়তার দাবিও জানানো হয়েছে সভা থেকে। সভায় ন্যাশনাল কেমিক্যাল ও এবিকো ইন্ডাস্ট্রিজের শ্রমিকদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তাঁদের পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানানো হয়।
চীন সফরের আগে ভারত সফর ও ভারতকে রেলের করিডর দেওয়ার সমঝোতা চুক্তি সরকারের নতজানু নীতিরই বহিঃপ্রকাশ বলেও মনে করে সিপিবি। সভায় তারা বলেছে, বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী ও ভারতের শাসকগোষ্ঠীর ভূমিকা দেশের ওপর আধিপত্যের থাবা বাড়িয়ে তুলেছে।
সভায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। এতে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন লাকি আক্তার।