বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারতের পণ্য বর্জনের প্রতি সংহতি জানিয়ে গতকাল বুধবার একদল কর্মীকে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাঁর গায়ে থাকা ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দেন। তখন তাঁর সঙ্গে থাকা কর্মীরা সেই চাদর সেখানে আগুন দিয়ে পোড়ান। এই ঘটনা দলটির ভেতরে নানা আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
তবে রুহুল কবির রিজভী প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে আমি আমার ব্যবহার করা ভারতীয় চাদর ফেলে দিয়েছি। আমি নিজের চিন্তা থেকে ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলেছি।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনকে আমরা যৌক্তিক মনে করি। সে কারণে সেই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছি।’
গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে ছিল বিএনপি। সেই পটভূমিতেও নির্বাচন করেছে সরকার। নির্বাচন হওয়ার পর কিছুদিন ধরে বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে ভারতবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন।
কিন্তু রুহুল কবির রিজভী নিজের ব্যবহার করা ভারতীয় চাদর ফেলে দিয়ে দেশটির পণ্য বর্জনের আন্দোলনে যে সংহতি প্রকাশ করেছেন, এটি বিএনপির অবস্থান কি না, তা দলটির নেতাদের অনেকের কাছে স্পষ্ট নয়। দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি কীভাবে হয়েছে, এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।
‘৬৩টি দল ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনে’
গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মূলত ভারতীয় পণ্য বর্জনের সমর্থনে বক্তব্য দেন। গতকাল দুপুর ১২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের পরই রুহুল কবির রিজভী একদল কর্মীকে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে তাঁর গায়ে থাকা ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দেন। তখন তাঁর সঙ্গে থাকা কর্মীরা সেই চাদর সেখানে আগুন দিয়ে পোড়ান।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ভারতের সহযোগিতায় নির্বাচনের নামে তামাশা করেছে। তিনি বলেন, ‘এটি বুঝতে পেরে বাংলাদেশের জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জন করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এই ভারতীয় পণ্য বর্জনকে আমরা যৌক্তিক মনে করি।’ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রিজভী দাবি করেন, বিএনপিসহ ৬৩টি দল ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের জনগণের নয়, ভারতের সমর্থনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে আছে। আওয়ামী লীগ ভারতের সহযোগিতায় নির্বাচনের নামে তামাশা করেছে। ক্ষমতায় থাকতে তলেতলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারত বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে নয়, আওয়ামী লীগের পক্ষে।
রুহুল কবির লিখিত বক্তব্যে বলেন, ভোটাধিকার হরণ, গণতন্ত্র হত্যা, গুম, খুন ও অবিচারের জন্য ভারত দায়ী বলে জনগণ মনে করে। জনগণ তাঁদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে ভারতীয় পণ্য বর্জন করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সর্বত্র এখন ‘ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইনে’ উত্তাল। এটা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বাংলাদেশের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন।
ভারতীয় পণ্য বর্জনের এই আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে করেন জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির বলেন, বিএনপিসহ ৬৩টি দল এবং দেশপ্রেমিক জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জনের এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করছে। ভারতীয় পণ্য বর্জন মানে আওয়ামী লীগ সরকারকে বর্জন। কারণ, আওয়ামী লীগ একটি ভারতীয় পণ্য।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘কথায় কথায় প্রায় সব মন্ত্রী ভারত-বন্দনায় মত্ত হচ্ছেন। তাঁদের কথাবার্তা ও আচার-আচরণে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ এখন ভারতের স্যাটেলাইট রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারত পাশে ছিল বলেই বাংলাদেশের নির্বাচনে বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র অশুভ হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দেশে ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল, ওই সময় ভারত আমাদের পাশে ছিল। ২০১৮ সালে নির্বাচনে ভারত আমাদের সঙ্গে ছিল। এবারও ভারত আমাদের পাশে ছিল ও আছে।’
রুহুল কবির লিখিত বক্তব্যে বলেন, ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদের অকপট স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে, জাতিসংঘ সনদ সরাসরি লঙ্ঘন করে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার—সবকিছুর ওপর সরাসরি নগ্ন হস্তক্ষেপ করে চলেছে। গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন বা শক্তিতে নয়, ভারতের শক্তি ও সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে আছে। বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ পুরো দেশকে ‘ডামি রাষ্ট্র’ বানিয়ে ফেলেছে।