অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম এক মাসে নেওয়া উদ্যোগ ও কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নন ৫১ শতাংশ মানুষ। বিপরীতে ৪৫ শতাংশ মানুষ সরকারের এক মাসের উদ্যোগে সন্তুষ্ট বলে জানান। প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে পরিচালিত এক জনমত জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেয়। এক মাসে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ ও কার্যক্রম নিয়ে মানুষের মতামত জানতে ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা থেকে ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে জরিপ চালানো হয়। জরিপে মোট ১ লাখ ৩ হাজার ৬৫৬ জন ভোট দেন। জরিপে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল।
জরিপে প্রশ্ন করা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম এক মাসে নেওয়া উদ্যোগ ও কার্যক্রমে আপনি কি সন্তুষ্ট? এই প্রশ্নের জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন ৪৫ হাজার ২৭৩ জন বা ৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ তাঁরা সরকারের প্রথম এক মাসের উদ্যোগ ও কার্যক্রমে সন্তুষ্ট। অন্যদিকে ‘না’ বলেছেন ৫৩ হাজার ৭২২ জন, যা মোট মতামত প্রদানকারীর ৫১ শতাংশ। জরিপে অংশ নেওয়া বাকি ৪ শতাংশ মানুষ পক্ষে–বিপক্ষে কোনো মত দেননি। জরিপে জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ’, ‘না’–এর পাশাপাশি ‘মন্তব্য নেই’—এমন একটি ঘর ছিল। মন্তব্য নেই ঘরে ভোট দিয়েছেন ৩ হাজার ৬৬১ জন।
প্রথম এক মাসে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমনে করা মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতের ঘটনা জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্ত করা, গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন; ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে যাঁরা হতাহত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের দেখভালের জন্য ফাউন্ডেশন গঠন, নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া, জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী দল ও জোট পুনর্বাসনের সুযোগ পাবে না বলে ঘোষণা দেওয়া ইত্যাদি।
এর বাইরে আর্থিক খাত সংস্কার ও দুর্নীতি দমনেও সরকার কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ ও প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। নির্বাহী আদেশে নয়, গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন খাতভিত্তিক নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আর গত ১১ সেপ্টেম্বর সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করার ঘোষণা দেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
তবে বিভিন্ন জায়গায় ‘মব জাস্টিস’ (বিশৃঙ্খল জনগোষ্ঠীর বিচার) নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও ছিল প্রশ্ন। গত শনিবার জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটে চলা মব জাস্টিস, মন্দির ও মাজার ভাঙচুরের ঘটনা প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়’ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
নাগরিক কমিটির দাবি, মানুষ যেসব আকাঙ্ক্ষা থেকে আন্দোলনে নেমে এসেছিল, সেসব আকাঙ্ক্ষা এখনো অধরা। যেকোনো ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের তৎপরতা খুবই মন্থর ও ধীরগতির। সরকারকে মনে রাখতে হবে, তারা গণ–অভ্যুত্থানের সরকার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে যদি তারা ধারণ করতে না পারে, তা হবে দেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর।