আমাদেরও এক দফা, শেখ হাসিনা ছাড়া নির্বাচন নয়: ওবায়দুল কাদের

রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকের পাশের সড়কে শান্তি সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির এক দফার আন্দোলন ঘোষণার জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তাঁরাও এক দফা ঘোষণা করছেন। আর তা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।

যেকোনো সময় মাঠে নামার জন্য নেতা–কর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন পর্যন্ত খেলা হবে। মাঠ ছাড়বেন না। ডাক দিলেই চলে আসবেন।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করছেন, সেই সময়ে আজ বুধবার ঢাকায় দেড় কিলোমিটার দূরত্বে দুই দলের সমাবেশ থেকে এসব ঘোষণা দেওয়া হয়।

সরকার পতনের দাবিতে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের পাল্টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকের পাশের সড়কে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। সেখানে বক্তব্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ভোটে এলে হেরে যাবে, সেই ভয় থেকেই তারা শেখ হাসিনাকে ‘ঘৃণা’ করে।

তবে তাদের দাবির মুখে নতিস্বীকার না করার প্রত্যয় জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, ‘৪৮ বছরে শেখ হাসিনার মতো সৎ প্রধানমন্ত্রী পাইনি। জনপ্রিয় নেতা পাইনি।‌ সাহসী নেতা পাইনি।

একজন দক্ষ প্রশাসক পাইনি। এমন সফল একজন কূটনীতিক পাইনি। সেই শেখ হাসিনাকে হারাতে চাই না।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ যে নেত্রীর সততাকে ভালোবাসেন, পছন্দ করেন।‌ যে নেত্রীর পরিশ্রম ও সততাকে পছন্দ করেন। রাত দুইটায় তাঁকে ফোন করে পাওয়া যাবে, এমন নেতা হারাতে চাই না।’

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা মেট্রোরেল চায়নি। পদ্মা সেতু চায়নি। কর্ণফুলী টানেল চায়নি। রূপপুর প্রকল্প তাদের পছন্দ নয়। তারা শেখ হাসিনাকেও পছন্দ করে না। তাঁর (শেখ হাসিনা) অপরাধ, তিনি উন্নয়ন করেছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন।

যাদের হাতে রক্তের দাগ, তাদের সঙ্গে আপস–আলোচনা হবে না বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী অনেক মহানুভবতা দেখিয়েছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরও কোকোর (খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান) মৃত্যুর পর গুলশানে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু দরজা বন্ধ ছিল। এদের সাথে আপস করতে পারি না।’

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে সোচ্চার দেশগুলোর উদ্দেশেও কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা চান সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাদেরও লক্ষ্য সুষ্ঠু নির্বাচন।’ এই নির্বাচনে যারা বাধা দিতে আসবে, তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেন তিনি।

নেতা–কর্মীদের মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন জুলাই মাস। শোকের মাস আগস্ট। তারপর সেপ্টেম্বর, এখন থেকে কর্মসূচি চলবে।‌ একেক মাসে একেক রকম কর্মসূচি চলবে। আগস্ট মাসে শোকের কর্মসূচির পাশাপাশি গণসংযোগ চলবে।

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। ছাত্রলীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ছাত্র সমাবেশ করতে হবে। আর সময় নেই। অনেক কাজ সামনে।’ মহিলা আওয়ামী লীগকেও মহিলা সমাবেশ করার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির সরকার পতনের স্বপ্ন নয়াপল্টনের কাদাপানিতে ডুবে গেছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘বিএনপি অনেক স্বপ্ন দেখেছিল। কাঁথা–বালিশসহ অনেক লোক আনার চেষ্টা করেছিল। ডিসেম্বরে ওই স্বপ্ন গরুর হাটে গিয়ে মারা গেছে। আরেক স্বপ্ন দেখছে হাসিনার পদত্যাগের পর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নয়াপল্টনের কাদাপানিতে সেই স্বপ্ন আটকে গেছে।’

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, ‘মাত্র রিহার্সাল শুরু করেছি।‌ মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগকে চেনেন না। ঢাকা ছেড়ে পালাতে হবে।’‌ আওয়ামী লীগ কোনো দফা মানে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।