বিএনপির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির পদ থেকে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজের কথা বলা হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের দপ্তর সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই অব্যাহতির কথা জানানো হয়েছে। চিঠিতে গতকাল শনিবার (২০ এপ্রিল) থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের কথা উল্লেখ আছে।
বিষয়টি নিয়ে মাহবুব উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
গত ৬ ও ৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়। এতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) প্রার্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, মারধর, মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে।
বিএনপিপন্থী আইনজীবী ফোরাম ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফলের অভিযোগ করে। এ ঘটনায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের আসামি করে মামলা হয়, গ্রেপ্তার করা হয়।
এ পরিস্থিতিতে বিজয়ী সভাপতি পদ ছাড়া আরও তিনজন সদস্যকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সমিতির এ মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ না করার আহ্বান জানায়। কিন্তু মাহবুব উদ্দিন দায়িত্ব নেন। এ ছাড়া তিনি ফোরামের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের এ ফোরাম। এর প্রেক্ষাপটে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
অব্যাহতির চিঠিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বলছে, যে নির্বাচনে তাদের পুরো প্যানেলেরই বিজয় সুনিশ্চিত ছিল, সেখানে আওয়ামীপন্থীদের ভোট ডাকাতি জায়েজ করতে মাহবুব উদ্দিনকে সভাপতি পদে এবং ফাতিমা আকতার, মো. শফিকুল ইসলাম ও সৈয়দ ফজলে এলাহী অভিকে নামমাত্র সদস্যপদে বিজয়ী দেখানো হয়।
এ পরিস্থিতিতে গত ২৪ মার্চ খোকনসহ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জ্যেষ্ঠ নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি-সম্পাদকদের এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, খোকনসহ ফোরামের বিজয়ী বাকি তিন সদস্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। এই আহ্বান জানিয়ে গত ২৭ মার্চ তাঁদের চিঠি দেওয়া হয়।
সংগঠনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সদস্যপদে বিজয়ী ঘোষিত তিনজন দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু সংগঠনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে খোকন ৪ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া তিনি একই দিন এক মতবিনিময় সভায় কিছু লোককে দিয়ে দল ও দলের দায়িত্বশীল নেতাদের বিষোদ্গার করিয়েছেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে আইনজীবী ফোরামের শীর্ষ নেতাদের সম্পর্কে অবমাননাকর ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। সংগঠনের সিদ্ধান্ত মানবেন না বলে ঘোষণা করেছেন।
অবৈধভাবে ঘোষিত আওয়ামী লীগদলীয় তথাকথিত একজন সম্পাদকের হাতে হাত রেখে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মর্মে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে খোকনের এসব কার্যক্রমকে দলীয় চরম শৃঙ্খলাপরিপন্থী হিসেবে গণ্য করে ফোরাম। সর্বসম্মতভাবে তাঁকে ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।