দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলকে জাতীয় ঐক্য সংলাপের বাইরে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, এতে জাতিগতভাবে অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে ‘সংবিধান সংরক্ষণ’ দিবস পালন উপলক্ষে আজ শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে জি এম কাদের এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ঘিরে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এতে ঐক্যের নামে জাতীয় অনৈক্যের সূচনা হয়েছে। ৪৮টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে মাত্র ১৮টি দলের সঙ্গে তাঁর মতবিনিময় হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রাপ্ত ভোটের হার তুলে ধরেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, এ দুটি নির্বাচন দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। সেই নির্বাচন দুটির ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০০১ সালে বিএনপি ১৯৩টি আসন জিতে সরকার গঠন করেছিল। ওই নির্বাচনে বিএনপি ৪০ দশমিক ৯৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনে বিএনপির চেয়ে ১৩১ সিট কম পেয়েছিল। দলটির ভোটের হার ছিল ৪০ দশমিক ১৩ শতাংশ। নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভোটের ব্যবধান ছিল ১ শতাংশের কম। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। জাতীয় পার্টি ভোট পেয়েছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০০১ সালে জামায়াত পেয়েছিল ১৭টি আসন। তাদের ভোটের হার ছিল ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ।
২০০৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়েছিল। তাদের ভোটের হার ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। বিএনপি পেয়েছিল ৩০টি আসন। তাদের ভোটের হার ছিল ৩২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ২৭টি আসন। দলটির ভোটের হার ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলকে জাতীয় ঐক্যের ডাকের বাইরে রাখা হয়েছে, সংলাপের বাইরে রাখা হয়েছে।
আলোচনা সভায় সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত হবে না বলেও মন্তব্য করেন জাপার চেয়ারম্যান। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যারা দোষ করেছে, তাদের তদন্তের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করুন। আন্দাজে মামলা দিয়ে কাউকেই শাস্তি দেওয়া ঠিক নয়। একটি সংগঠনের সবাই কি অপরাধী? যদি তা–ই ভাবেন, তাহলে শেখ হাসিনার সঙ্গে আপনাদের তফাত কী? শেখ হাসিনা মনে করতেন, বিএনপি ও জামায়াত করলেই অপরাধী। এখন তো আপনারা সেটাই করছেন।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা চাই, আগামী নির্বাচনে সব দল অংশ নিক। যাদের নিবন্ধন দিয়েছেন, তাদের কেন নির্বাচনে আসতে দেবেন না?’
মানুষকে পথেঘাটে নির্যাতন করা হচ্ছে উল্লেখ করে জাপার চেয়ারম্যান প্রশ্ন তোলেন, ‘এভাবে রাষ্ট্র সংস্কার, জাতীয় ঐক্য বা নির্বাচন সম্ভব হবে? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্য থেকেই রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ ও প্রশাসন এখন কার কথায় চলছে? এমন বাস্তবতায় আমাদের লোকজন ভোট দিতে পারবে? আমাদের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনের মাঠে দাঁড়াতে পারবে? কয়েকটি দল নিয়ে আওয়ামী লীগের মতো একতরফা নির্বাচন করে সব পাস করিয়ে দিলেন, সেটা কি টেকসই হবে? এমন সংস্কারে কি রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে?’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া।