সর্বশেষ তিনটি জাতীয় নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচনী অপরাধ করেছেন, তাঁদের শাস্তির সুপারিশ, সরাসরি ভোটে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আজ বৃহস্পতিবার সকালে সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। সেখানে এসব পরামর্শ উঠে আসে।
আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তফা কামাল, প্রতিদিনের সংবাদের সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল, আশরাফ কায়সার, বাসসের প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, ডেইলি স্টার বাংলার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা, সমকালের সহকারী সম্পাদক সাইফুর রহমান প্রমুখ মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।
মতবিনিময় সভা শেষে সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, কমিশনের চিন্তা ও অগ্রাধিকারের বিষয়ে সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো সুপারিশ করেছেন। তার মধ্যে আছে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোট, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেন থাকে, জাতীয় নির্বাচনের আগে যেন স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হয়, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব প্রকাশ করা।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তাঁরা বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন পর্যালোচনা করছেন। বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সর্বশেষ তিনটি নির্বাচন কমিশনকে সংস্কার কমিশনে ডাকার বিষয়টি তাঁরা বিবেচনা করবেন।
মতবিনিময় সভা শেষে আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ভোটের সময় গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে অনেক আগেই থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য আইনের পরিমার্জন, পরিবর্ধন করতে হবে। অতীতে দেখা গেছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রভাবিত হয়, সে সুযোগ যেন না থাকে।
সোহরাব হাসান সাংবাদিকদের বলেন, যে ব্যক্তি যে এলাকার বাসিন্দা, তিনি সেখানকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবেন—এমন বিধান করা; নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করতে রাষ্ট্রীয় খরচে নির্বাচনী প্রচারের ব্যবস্থা করা, সংরক্ষিত নারী আসনে ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে বা তিনটি সাধারণ আসন মিলিয়ে একটি নারী আসন করে সেখানে সরাসরি ভোট করা এবং নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করা, যাতে সব নাগরিক তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে বাছাই করে নিতে পারেন, সে ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছেন মাসুদ কামাল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হোক, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা প্রভাবিত করে থাকে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করতে পারলে দলীয় সরকারের অধীনে যে সমস্যা হয়, তার ৮০ শতাংশ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব বলে মনে করেন মোস্তাফিজ শফি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো সরকারের কাছে পেশ করার পাশাপাশি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা, নারী আসনে সরাসরি ভোট, প্রবাসী এবং সাংবাদিকসহ যাঁরা নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনে থাকেন, তাঁদের আগাম ভোটের ব্যবস্থা করার প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেন।
গোলাম মোর্তোজা সাংবাদিকদের বলেন, আগামী নির্বাচন ভালো করতে হলে গত তিনটি কমিশনকে সুনির্দিষ্টভাবে প্রধানদের সঙ্গে বসে প্রকৃত তথ্যটা জানা দরকার। ২০১৪ সালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন কেন ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিলেন, সরকার তাঁকে কী নির্দেশনা দিয়েছিল, সেটা জানা দরকার। ২০১৮ সালে নূরুল হুদার কমিশন রাতের ভোট কোন প্রেক্ষাপটে করেছিল, সেটা তাঁর কাছে জানতে চাইতে হবে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে কেন ভোটারের সংখ্যা বেড়ে গেল, সেটা কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের কাছে জানতে চাইতে হবে। এই বিষয়গুলো জানার আলোকে সুপারিশ দিতে হবে। এ ছাড়া যাঁরা নির্বাচনী অপরাধ যাঁরা করেছিলেন, তাঁদের যেন শাস্তির আওতায় আনা যায়, সেই সুপারিশ থাকা দরকার।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময়
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন আজ বিকেলে স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। মতবিনিময় শেষে কমিশনের সদস্য আবদুল আলীম সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সময় পর্যন্ত সংস্থাগুলো কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়, তা কমিশন শুনেছে।
আবদুল আলীম বলেন, পর্যবেক্ষকেরা কমিশনকে বলেছেন, তাঁদের তহবিল যদি রাজস্ব খাত থেকে দেওয়া হয়, তাহলে ভালো হয়। এ ছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সময় ভোটকেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা; বিনা বাধায় যাতে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা; প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; নির্বাচনে তাঁরা যা দেখেন, তা যেন প্রতিবেদনে তুলে ধরতে পারেন, সে জন্য সুরক্ষা; পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিবেদনগুলো কাজে লাগানো এবং একটি ভোটকেন্দ্রে যেন সারা দিন পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, সে সুযোগ চেয়েছেন তাঁরা।