দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৪ প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ১২ জনই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। বাকি দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন।
একাদশ ও দশম—২টি জাতীয় সংসদেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে নির্বাচিত সদস্য ছিলেন ১৮ জন। সে হিসাবে এবার জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি কমবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সব সময় চেয়েছি, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে মনোনয়ন দেওয়া হোক। বরং এবার সংসদে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি কমে গেল। সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রতিনিধিরা তাঁদের নিজ নিজ এলাকার মানুষের কথা সংসদে বলুক।’
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২০ জন ধর্মীয় ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়। পরে সমঝোতায় দুটি আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন দলের ১৮ জন সংখ্যালঘু প্রার্থী। আওয়ামী লীগ থেকে জয় পাওয়া নয়জন ধর্মীয় ও তিনজন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার। নৌকার প্রার্থী হয়েও হেরে গেছেন ছয় সংখ্যালঘু প্রার্থী।
নৌকার প্রার্থী হয়ে যাঁরা জয়ী হয়েছেন, তাঁরা হলেন রণজিত চন্দ্র সরকার (সুনামগঞ্জ-১), সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন (ঠাকুরগাঁও-১), সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে (কুড়িগ্রাম–৩), সাধন চন্দ্র মজুমদার (নওগাঁ-১), সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (নওগাঁ–৩), সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার (মাগুরা-২), ননী গোপাল মণ্ডল (খুলনা–১), নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (খুলনা–৫) ও প্রাণ গোপাল দত্ত (কুমিল্লা–৭)।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছেন সুনামগঞ্জ-২ আসনে জয়া সেনগুপ্তা এবং বরিশাল-৪ আসনে পঙ্কজ নাথ। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা থেকে। তাঁদের মধ্যে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি), দীপঙ্কর তালুকদার (রাঙামাটি) ও বীর বাহাদুর উ শৈ সিং (বান্দরবান) থেকে জয়লাভ করেন।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মনোনীত প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি; যেমন সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের জন্য ভূমি কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবেন।’
এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে হেরে গেছেন ছয় সংখ্যালঘু প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন ধর্মীয় ও একজন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার।
হেরে যাওয়া প্রার্থীরা হলেন মনোরঞ্জন শীল গোপাল (দিনাজপুর-১), স্বপন ভট্টাচার্য (যশোর-৫), ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু (বরগুনা-১), অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোনা-৩) ও মৃণাল কান্তি দাস (মুন্সিগঞ্জ-৩)। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রতিনিধিদের মধ্যে জুয়েল আরেং (ময়মনসিংহ-১) হেরেছেন।
আওয়ামী লীগ কানাই লাল বিশ্বাস (পিরোজপুর-২) ও তুষার কান্তি মণ্ডলকে (রংপুর-৩) মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে আসন সমঝোতায় এই দুটি আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।