এ রকম পরিবেশ হলে নির্বাচন করার দরকারই নেই: হিরো আলম

বনানীতে ভোটকেন্দ্রে নৌকার সমর্থকদের হামলার শিকার হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন হিরো আলম। সোমবার সন্ধ্যায় হাতিরঝিল সংলগ্ন মহানগর প্রকল্প–২ এ
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ঢাকা–১৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলাকালে নৌকার সমর্থকদের হামলার শিকার স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম বলেছেন, এ রকম পরিবেশ হলে আর নির্বাচন করার প্রয়োজন দেখছেন না তিনি।

এর আগেও নির্বাচন ঘিরে কয়েক দফায় হামলার শিকার হিরো আলম এ ঘটনায় মামলা করে বিচার পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই উপনির্বাচনের প্রচার চলাকালে মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে তাঁর ওপর হামলা করা হয়েছে। তখন তিনি বনানী থানায় গিয়ে মামলা করেছেন। কিন্তু বিচার পাননি। এসব মামলার বিচার হয় না বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষুব্ধ হিরো আলম।

ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে হামলার শিকার হন হিরো আলম। ১৭ জুলাই

ঢাকার গুলশান, বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত (মোহাম্মদ এ আরাফাত) বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ভোটের হিসাবে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন হিরো আলম। সোমবার বিকেলে ভোট চলাকালে বনানীর একটি কেন্দ্রে গিয়ে নৌকার সমর্থকদের হামলার শিকার হন তিনি। রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে।

আক্রান্ত হওয়ার পর হিরো আলম একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। সেখান থেকে হাতিরঝিলসংলগ্ন মহানগর প্রকল্প-২–এ নিজের বাসায় ফিরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন।

ভোটকেন্দ্রের ভেতরে হিরো আলমের ওপর হামলার চেষ্টা হলে পুলিশ বাধা দেয়

নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়ে হিরো আলম বলেন, ‘আমি আজ যে আঘাত পেয়েছি, সেই আঘাতেই বোঝা যায়, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি হয়নি। তাই এই নির্বাচন আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, জাতি দেখেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।’ সকাল থেকেই নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়গুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

হিরো আলম সকাল থেকে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করছিলেন। বেলা সোয়া তিনটার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রের বাইরে তাঁর ওপর হামলা হয়। হিরো আলম বলেন, ‘আমার মাথায় আঘাত করেছে প্রচুর, বুকে আঘাত করেছে, কানে আঘাত করেছে। যখন পড়ে গেছি, গায়ে লাথিগুঁতা মেরেছে।’

হামলার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘গেট (ভোটকেন্দ্রের) থেকে বের হয়ে আসার সময় আমাকে একজন ধাক্কা মারল। গেট থেকে বের হওয়ার পর থেকেই আমাকে মারধর করা শুরু করল। ওই সময় যখন আমি রাস্তার মধ্যে পড়ে গেলাম, তখন সবাই আমাকে গুঁতা–কিল–ঘুষি মেরেছে।’

লাঠি দিয়েও আঘাত করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সেই লাঠির আঘাতটা আমাকে না লেগে আমার পরে যে একজন ছিল, তার মাথার ওপর লাগে। রাজীব নামের একটা ছেলের মাথায় সেই আঘাতটা লাগে। আল-আমিন, শুভ, ইলিয়াস ভাই, সানি—সবাইকে তারা আঘাত করেছে।’

হত্যার পরিকল্পনা থেকেই তাঁর ওপর এই হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন হিরো আলম। তিনি বলেন, ‘আমার ওপর যে আঘাতটা হয়েছে, এই আঘাত কিন্তু এবার প্রথম না, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় যখন আমি নির্বাচন করেছিলাম, সেই সময় আমার ওপর এ রকম আঘাত হয়েছিল। এই আঘাতটা আমাকে অনেক দিন ধরেই পরিকল্পনা করে করা হয়েছে। আমাকে মেরে ফেলে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা করেছিল।’

হিরো আলম অনেক সমর্থক ইউটিউবারকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলেন বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা সঠিক নয় বলে দাবি করেন হিরো আলম। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ তো ভোটকেন্দ্রে তিন–চারজন সাংবাদিককেই একসঙ্গে ঢুকতে দেয় না। সেখানে আমি ৭০–৮০ জন ইউটিউবার নিয়ে কীভাবে ঢুকব?’

নির্বাচনে অনিয়ম ও তাঁর ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে বিদেশিদের কাছে চিঠি পাঠাবেন বলেও জানিয়েছেন হিরো আলম। তিনি বলেছেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দেব, আমেরিকান এম্বাসিকে দেব এবং যেখানে যেখানে অভিযোগ জানাতে হবে, আমি প্রতিটা জায়গায় চিঠি দেব।’