সরকার একতরফাভাবে তামাশার নির্বাচন মঞ্চস্থ করছে। প্রীতি ফুটবল ম্যাচের মতো বন্ধুরা মিলে নির্বাচনের আয়োজন করেছে। এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। আজ রোববার দুপুরে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেছেন বক্তারা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে দুপুর ১২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সরকার চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে এখন আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত হয়ে উঠেছে বলে সমাবেশে অভিযোগ করেন নেতারা।
সমাবেশে আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন বন্ধ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান বক্তারা। তাঁরা ৭ জানুয়ারি ভোটদানে বিরত থাকতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বিভিন্ন দলকে এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেন।
বাংলাদেশের ছয়টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিয়ে গঠিত একটি রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। দল ও সংগঠনগুলো হলো জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
সমাবেশ শুরুর সময় বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে চারটি মিছিল এসে যোগ দেয়। একতরফা নির্বাচন বন্ধ, এ সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিলেন কর্মীরা। সমাবেশ শুরুর আগে থেকেই এলাকাজুড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সমাবেশে বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না) অভিযোগ করেন, দেশে এখন মানুষের মতো বেঁচে থাকার অধিকার নেই। তিনি বলেন, বড় বড় প্রকল্প নিয়ে বেশি টাকা খরচ করে লুটপাটের উৎসব করছে সরকার। সরকারের কারও আয় বেড়েছে ৫০ গুণ। সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি, তাঁদের জন্য বাড়ানো হয়েছে পেঁয়াজের দাম। উন্নয়নের নাম করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘৭ জানুয়ারি ভোট হবে না। ওই দিন দেখা যাবে ফল ঘোষণা করা হয়েছে। অপেক্ষা করেন সব ঋণ শোধ করতে হবে। যত টাকা লুট করেছেন, তা পাই পাই করে হিসাব দিতে হবে। অপেক্ষা করেন, ঐকমত্য থাকেন। লড়াই চলবে।’
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলনে ও গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এ দেশের মানুষকে অত্যাচার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করছে। সরকার বলছে, বিরোধী দল নাকি আন্দোলনে হেরে গেছে। তারা বিরোধী দলের কোনো আন্দোলন দেখেন না। বিরোধী দল করার কারণে বাবাকে না পেয়ে মাকে ধরে নিয়ে গেছে, শিশুসন্তান রাস্তায় বসে কাঁদছে। বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে গাড়ি পোড়ানোর মামলা দিচ্ছে।’
ন্যূনতম দায়বোধ আছে, এমন মানুষ এই নির্বাচনে ভোট দিতে যাবে না বলে মন্তব্য করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, কেউ ভোটে না গেলে সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। সে জন্য লড়াই গড়ে তোলা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে দুনিয়ার দরবারে গুম-খুনের দেশ হিসেবে পরিচিত করছে এ সরকার। এ সরকারকে হটিয়ে সমতার ও মর্যাদার দেশে পরিণত করতে চাই।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘এ সরকার মানবাধিকার হরণকারী সরকার হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত। প্রীতি ফুটবল ম্যাচের মতো বন্ধুরা বন্ধুরা মিলে তামাশার নির্বাচন মঞ্চস্থ করছে। পোলাও বরাদ্দের মতো আসন ভাগ-বাঁটোয়ারা করছে।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ (স্বপন), রাষ্ট্র সংস্থার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু)। সমাবেশ পরিচালনা করেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য মনিরউদ্দিন (পাপ্পু)।