বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ‘দাঁত ছাড়া বাঘ’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু)। তিনি বলেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের কথা না শুনলে কী হবে, তা আইনে বলা নেই। কথা না শুনলে তড়িৎ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান না থাকায় নির্বাচন কমিশন এখন দাঁত ছাড়া বাঘ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মুজিবুল হক এসব কথা বলেন।
গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনে বড় রদবদল করতে গেলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। নির্বাচনের আগে যৌক্তিক কারণ ছাড়া নির্বাচন কমিশন (ইসি) মাঠ প্রশাসনে রদবদলের উদ্যোগ নেবে না।
এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মুজিবুল হক বলেন, ‘আইন অনুযায়ী, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের কথা শুনতে বাধ্য৷ কিন্তু কথা না শুনলে কী হবে? সেটা আইনে উল্লেখ নাই। বলা আছে, নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট বিভাগকে পাঠাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’
মুজিবুল হক বলেন, ‘আমি ও আমার দলের চেয়ারম্যান সংসদে একাধিকবার বলেছিলাম, একটা আইন করেন নির্বাচন কমিশনের কথা না শুনলে তারাই যেন তড়িৎ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। এটা দেওয়া হলে নির্বাচন কমিশন বাঘের মতো কাজ করত। এই আইন না থাকায় নির্বাচন কমিশন এখন বাঘ, কিন্তু দাঁত ছাড়া।’
গত সোমবার থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার মনোনয়ন ফরম বিক্রির শেষ দিন। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও তাঁর ছেলে সাদ এরশাদ আজ দুপুর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।
এই বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ অসুস্থ। উনি যদি নির্বাচন করতে চান, তাহলে অবশ্যই করবেন। ওনার ছেলেও যদি নির্বাচন করতে চায়, করবেন। এটা নিয়ে তো কোনো দ্বন্দ্ব নাই।
রওশন এরশাদ ৩দিন আগে তাঁকে ফোন করেছিলেন জানিয়ে মুজিবুল হক বলেন, ‘ওনার এবং ওনার ছেলের মনোনয়ন ফরম নেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত সহকারীকে পাঠাবেন বলেছেন। এখনো পাঠাননি। তিনি আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, তিনি আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। উনি নির্বাচন করলে আমরা খুশি, তাঁকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করব। উনি নির্বাচন না করলে ভিন্ন বিষয়। নির্বাচন করবেন না, এমন কিছু এখন পর্যন্ত বলেন নাই।’
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম বিক্রির শেষ দিন। আর নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর। আজকের পরে রওশন এরশাদের জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাওয়ার সুযোগ রয়েছে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে মুজিবুল হক বলেন, উনি আমাদের জন্য বিশেষ ব্যক্তি, তার জন্য যে কোনো সুযোগ আছে। ওনার জন্য যে কোনো ফাঁক থাকলেও সেটা কাজে লাগানো হবে।
নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জাতীয় পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে বলে আশা প্রকাশ করে মুজিবুল হক বলেন, আশা করছি, নির্বাচন কমিশনসহ যারা আশ্বস্ত করেছেন তারা কথা রাখবেন। বিশ্বাস করা ছাড়া তো উপায় নাই। জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে জাপা। বড় দুটি দল সুশাসন দিতে পারে নাই৷
জাতীয় পার্টির (জাপা) সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি পাওয়া জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও দলের সাবেক মহাসচিব দেওয়া হলো মসিউর রহমানের (রাঙ্গা) মনোনয়নের বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা৷ এর জবাবে মুজিবুল হক বলেন, যারা বহিষ্কৃত তাদের মনোনয়ন ফরম দেওয়ার সুযোগ নেই। বহিষ্কৃত কেউ চেয়ারম্যান বরাবর আপিল করলেই ফরম দেওয়ার সুযোগ হতে পারে। বহিষ্কৃত কেউ কেউ যোগাযোগ করছেন বলে তিনি জানান।