সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ২০১৯ সালে বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনের ঘটনা তদন্ত করে ৬২ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। সে সময় অননুমোদিত ১ হাজার ৩০০ ভবন চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেগুলো ভাঙা সম্ভব হয়নি। নারায়ণগঞ্জে একটি ফুড ফ্যাক্টরিতে আগুনের ঘটনায় আজ পর্যন্ত বিচার শুরু হয়নি।
এসব ঘটনাকে একধরনের দায়মুক্তি উল্লেখ করে শ ম রেজাউল করিম এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারে প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানান।
আজ শনিবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিম এসব কথা বলেন।
এর আগে আজ বিকেলে সংসদের বৈঠকের শুরুতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বেইলি রোডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘বড় অপরাধীদের বিচার হয়েছে। সে ক্ষেত্রে দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় আরও কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
২০১৯ সালে বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। ওই সময় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ছিলেন শ ম রেজাউল করিম। ওই ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর ঘটনা তদন্ত করে তাঁরা ৬২ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্য, সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরও সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। তারপর চার্জশিট দেওয়ার সময় অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, আজকে পর্যন্ত সে মামলার অভিযোগ গঠন পর্যন্ত হয়নি।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা সে সময় ১ হাজার ৩০০ ভবনকে চিহ্নিত করেছিলাম, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে, যে ভবনের প্ল্যান ঠিক নেই, যে ভবনের অধিকাংশ ফ্লোর অননুমোদিতভাবে করা হয়েছে, সে ভবনগুলো কিন্তু ভাঙা সম্ভব হয়নি। এটাও কিন্তু এক প্রকার দায়মুক্তি দেওয়া।’
২০২১ সালে নারায়ণগঞ্জে একটি ফুড কারখানায় আগুনের ঘটনা উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে একটি ফ্যাক্টরিতে ৫২ জন লোককে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো। সে মামলার আসামিরা জেলে গেছে; কিন্তু আজ পর্যন্ত বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি।’
এ রকম অনেক ঘটনা আছে উল্লেখ করে শ ম রেজাউল করিম বলেন, এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত, প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে তাদের বিচার করা না হলে শুধু এই অপরাধ নয়, অন্যদের কাছে একটি বার্তা যাবে না।
সংসদে আজ অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক বলেন, ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের ছয়টি সংস্থার ছাড়পত্র লাগে। ছাড়পত্র দেওয়ার পর ভবনগুলোর নজরদারি নেই। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি এলাকায় রাজউকের কর্মকর্তা থাকেন। সেই কর্মকর্তারা কোথায়? এক একটা ভবন তৈরি করা হয় একটা উদ্দেশ্যে, কিন্তু যায় আরেকটা উদ্দেশ্যে। এই যে মানুষগুলো মারা গেল জবাব দেবে কে? এর দায়দায়িত্ব সরকারের, সরকারের সংস্থা, সরকারের অফিসের।’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, এক একটা সময় একটা ঘটনা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় তদন্ত করা হবে, তদন্ত টিম করা হয়; কিন্তু এরপর কোনো ফলোআপ নেই। এভাবে দেশ চলতে পারে না। সরকারের জবাবদিহি করার দরকার। দায়দায়িত্ব নিয়ে সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক সংসদে বলেন, ‘ধানমন্ডির সাতমসজিদ এলাকায় একটা ভবনে ১৫টি রেস্টুরেন্ট। সেগুলোর কোনো অনুমতি নেই। ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোডের রাস্তার পাশে ভবনে কয়েক শ রেস্টুরেন্ট, কিন্তু সেগুলোর অনুমতি নেই। খিলগাঁওয়ের তালতলায় বহুতল ভবনে একই অবস্থা। আরও এ রকম ঘটনা ঘটবে। যদি সরকার এ বিষয়ে সচেতন না হয়, সরকারকে বলব, দায়দায়িত্ব নিয়ে এগুলোর জন্য কারা কারা দায়ী, সেটা রাজউক হোক, ফায়ার সার্ভিস হোক, পরিবেশ অধিদপ্তর হোক, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, তার ব্যবস্থা করা।’