পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহীদের সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩৪ জন দলের মনোনয়ন পেতে ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে বর্তমান মেয়রদের সবাই আবারও দলের মনোনয়ন পেতে ফরম সংগ্রহ করেছেন। আজ বুধবার ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার শেষ দিন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশনে এখন যাঁরা মেয়র আছেন, তাঁরাই মনোনয়ন পাচ্ছেন—এমন ধারণা দলের অধিকাংশ নেতার। এ জন্য এই দুই সিটি করপোরেশনে বর্তমান মেয়রের বাইরে আগ্রহীর সংখ্যা খুবই কম। রাজশাহীতে বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ছাড়া আওয়ামী লীগের রাজশাহী মহানগর সহসভাপতি মাহফুজুল আলম ফরম সংগ্রহ করেছেন।
খুলনায় বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এবারও প্রত্যাশী। এর বাইরে খুলনা মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, সদস্য রুনু রেমা ও সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
তবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে গাজীপুর, সিলেট ও বরিশাল সিটির মনোনয়ন নিয়ে। এই তিন সিটিতে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা গতকাল পর্যন্ত ২৮। তিন সিটিতে মেয়র পদে নতুনেরা আসতে পারেন—এমন আলোচনাও দলে জোরালো।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুসারে, আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ হবে। খুলনা ও বরিশালে ভোট হবে আগামী ১২ জুন। আর ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল পর্যন্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ১১ জন দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে গতকাল ফরম সংগ্রহ করেছেন সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান। ২০১৩ সালের ভোটে আজমত উল্লা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির এম এ মান্নানের কাছে পরাজিত হন। পরেরবার ২০১৮ সালে দলের মনোনয়নে জয়ী হন জাহাঙ্গীর আলম। এর মধ্যে গত বছর বিতর্কিত মন্তব্য করে তিনি দল ও মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হন। এর পর থেকে প্যানেল মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আসাদুর রহমান। তিনিও মনোনয়ন চেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, আজমত উল্লা ও জাহাঙ্গীরের মধ্যে যেকোনো একজন মনোনয়ন পেতে পারেন বলে দলে আলোচনা আছে।
এর বাইরে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের চাচা মতিউর রহমান ও মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকারও ফরম সংগ্রহ করেছেন। স্থানীয়ভাবে তাঁদেরও প্রভাব রয়েছে।
বরিশালে গতকাল পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন সাতজন। তবে মূল আলোচনায় বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। দুজনই দলের মনোনয়ন চেয়ে ফরম সংগ্রহ করায় আলোচনা জমে উঠেছে। সূত্র বলছে, বর্তমান মেয়র হিসেবে সাদিক আবদুল্লাহর সম্ভাবনাই বেশি দেখছেন দলের নেতারা। কারণ, তাঁর বাবা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর পুরো বরিশাল বিভাগের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাব রয়েছে। তিনি স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যও।
সিলেটে গতকাল পর্যন্ত ১০ জন দলের মনোনয়ন চেয়ে ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে বড় নাম আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন সিরাজ। রয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদধারী আটজন ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
মেসবাহ উদ্দিন সিরাজ সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বেঁচে থাকা অবস্থায়ও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মহানগরের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদও আগেরবার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। অন্য প্রার্থীরাও স্থানীয়ভাবে পরিচিত। এ পরিস্থিতিতে প্রবাসী বনাম দেশি—এই দুই ধারার কার বিজয় হয়, সেটা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে সিলেটের রাজনীতিতে।