সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জাতির জন্য লজ্জার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘এর জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী এই সরকার। তারা সেনাবাহিনীকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।’
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। সংবাদ সম্মেলনের আগে জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি ঠিক করতে যৌথ সভা করে বিএনপি। সভায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের বাইরের মিডিয়া থেকেও বলা হয়েছিল সাবেক সেনাপ্রধান আজিজের কথা। তখন সরকার সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এভাবে দেশ ও জাতির মর্যাদা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের সম্মানকে এভাবে কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, সেনাবাহিনী হচ্ছে একটা প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে ভরসার একটা প্রতিষ্ঠান। সেই সেনাবাহিনীকে আজকে এভাবে যদি তাদের (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) কারণে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়, এটা কখনোই এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ। এ প্রসঙ্গে বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে...বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক নয়, তাদের তথাকথিত সংসদ সদস্য বিদেশে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেলেন! তাঁর কোনো খবর তারা দিতে পারলেন না! না পারলেন বাংলাদেশ সরকার, না পারলেন বন্ধুরাষ্ট্র ভারত। আমরা কী মনে করব? এটার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতি করা, টাকার পাহাড় তৈরি করা, বিদেশে পাঠানো। ওইটারই কোনো ঘটনা কি না, আমরা জানি না।’
দেশে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে ভোটার–খরা নিয়ে মির্জা ফখরুলের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখছি না। দেশের গণমাধ্যম নির্বাচনকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।’ নির্বাচনব্যবস্থার ওপর মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলার কারণে ভোট দিতে যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, তথাকথিত উন্নয়নের নামে জনগণের কাঁধে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ এসবের প্রতিবাদে একদিন রুখে দাঁড়াবে।
ইতিহাস থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে, এমন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতাসীনেরা তাঁকে খলনায়ক হিসেবে দেখাতে চায়। এ জন্য পাঠ্যপুস্তকেও ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। মিথ্যা কথা বলে জিয়াউর রহমানকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২৮ মে থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ১৫ দিনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, সেমিনার, বিনা মূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদি। মৃত্যুবার্ষিকীর দিন ৩০ মে সকাল সাড়ে ১০টায় শেরেবাংলা নগরে শহীদ জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত ও তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল হবে।
এ ছাড়া ৩০ মে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালযে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলো জিয়াউর রহমানকে নিয়ে পোস্টার প্রকাশ ও বিভিন্ন দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। ৩০ মে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে দুস্থ মানুষের মধ্যে খাবার ও বস্ত্র বিতরণ করবে।
বিএনপির মহাসচিব জানান, ২৯ মে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা এবং ৩১ মে জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণদোয়া হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও সারা দেশে জেলা ও ইউনিট কার্যালয়ে জিয়াউর রহমানের স্মরণে আলোচনা সভা, দুস্থ মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করবে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের অভ্যুত্থানে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।