তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অবশ্যই ফেরানো উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ। তিনি বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের নৈতিকভাবে রাজনীতি করার অধিকার নেই মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিধান সংবিধানে রাখতে হবে।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আজ শনিবার বিকেলে এক অনুষ্ঠানে বিজেপি চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। ‘স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথে: সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিজেপি।
বর্তমান সংবিধান ফ্যাসিস্ট বানানোর বড় কারখানায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আন্দালিভ রহমান। তিনি বলেন, বিগত সরকার এই সংবিধানকে ব্যবহার করে বারবার মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, ভোটের অধিকার গণতন্ত্রের গলাটিপে সব ধ্বংস করে ফেলেছে। সুতরাং এই সংবিধান দিয়ে যেকোনো সরকার পরিচালিত হলে তাদের ফ্যাসিস্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।
বিজেপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান প্রাসঙ্গিক হওয়া প্রয়োজন। এই সংবিধান আজকের দিনের কথা বলে না। সুতরাং এর সংস্কার চাই। সংবিধান সংস্কার করবে কে? আমি এখনো বিশ্বাস করি, সংবিধান সংস্কার করতে হলে জনগণের সরকারের প্রয়োজন। বিশ্বাস করি, নির্বাচিত সরকারই সংবিধান সংস্কার করার নৈতিক অধিকার রাখে।’
আওয়ামী লীগের নৈতিকভাবে রাজনীতি করার অধিকার নেই বলে উল্লেখ করেন আন্দালিভ রহমান। বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক দল মানুষের কথা না বলে গণহত্যায়, মানুষ হত্যায় যাবে—এ ধরনের রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিধান সংবিধানে রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
অর্থনৈতিক রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পাস করা উচিত মন্তব্য করে বিজেপি চেয়ারম্যান বলেন, যাদের দুর্নীতির জন্য বিদেশের মাটিতে দেশের সম্মানহানি হয়, দেশের মানুষ ছোট হয়, যাদের দুর্নীতি দেখে বিদেশিরা দেশে বিনিয়োগ করতে চায় না—এ ধরনের অপরাধীরা ফরমাল (স্বাভাবিক) চোর না। তারা বিশেষ চোর। এদের জন্য বিশেষ আইন থাকা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, জুডিশিয়াল কমিশনের বিচারক নিয়োগ—এই ব্যাপারগুলো আগামী দিনে যারা সরকারে আসবে বা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে, তাদের বসে এগুলো করা উচিত বলে মনে করেন বিজেপি চেয়ারম্যান। তিনি আরও বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সংসদ সদস্যের দায়িত্বের বিষয়ে সংবিধানে কিছু নেই উল্লেখ করে আন্দালিভ রহমান বলেন, সংসদ সদস্যদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে সংবিধানে থাকা উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য হয় রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কোনো ধরনের বৈষম্য করা যাবে না, সংবিধানে এটা থাকা দরকার।
আন্দালিভ রহমান আরও বলেন, ‘কিছু প্রস্তাব আছে, অবশ্যই কোনো নির্বাচিত সরকারের ঠিক করা উচিত। কিছু প্রস্তাব আছে, সেগুলো সব দল মিলে, যেহেতু এটি জনগণের সরকার—সবাই একমত হলে সে প্রস্তাবগুলো দিতে পারি। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার সেগুলো আমলে নিতে পারে।’
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে আন্দালিভ রহমান বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে আরও অনেক কথা বলার সুযোগ আছে। সেটি কোনো নির্বাচিত সরকারের করা উচিত।
প্রবাসীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখার প্রস্তাব তুলে ধরে বিজেপি চেয়ারম্যান বলেন, প্রবাসীদের নির্বাচনের সুযোগ দিতে হবে। প্রবাসী কোটা ও তৈরি পোশাকশ্রমিক কোটায় সংসদ সদস্য পার্লামেন্টে থাকা উচিত।
বিজেপির মহাসচিব আবদুল মতিন সাউদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন প্রকাশ, বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস মাতাব্বর, বাংলাদেশ জাতীয় যুব সংহতির আহ্বায়ক মো. হারুন–অর–রশিদ ও বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্র সমাজের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বক্তব্য দেন।